Friday, May 6, 2022
অপারেটিং সিস্টেম কাকে বলে?
কম্পিউটার পরিচালনার জন্য ব্যাবহৃত হার্ডওয়্যারের সাথে অন্যান্য সফটওয়্যারের সমন্বয়ে সাধনের উপাদান হচ্ছে অপারেটিং সিস্টেম। হার্ডওয়্যারের সাথে সমন্বয় করে ব্যাবহারিক প্রোগ্রাম পরিচালনা, প্রাথমিক সৃতিসহ সকল ধরনের সহায়ক সৃতিতে তথ্য সংরক্ষন ব্যাবস্থাপনা প্রভৃতি কার্যক্রম প্রধানত অপারেটিং সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত হয়। এক কথায় বলা যায় কম্পিউটার সংগঠনের যন্ত্রাংশ সমুহকে কার্যক্রম করাই হচ্ছে অপারেটিং সিস্টেম। তবে হ্যা স্মার্ট ডিভাইসের সকল ক্ষেত্রেই অপারেটিং সিস্টেম থাকে। যেমন স্মার্টফোনের জন্য রয়েছে এন্ড্রয়েড।
হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের ভিন্নতা এবং কার্যক্রমের ধরন অনুসারে বিভিন্ন প্রকারের অপারেটিং সিস্টেম ব্যাবহৃত হয়। বর্ণ ভিত্তিক নির্দেশ প্রদান সম্পন্ন একটি অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে DOS. নেটওয়ার্ক ভিত্তিক কাজের জন্য ইউনিক্স, লিনাক্স প্রভৃতি চিত্রভিত্তিক নির্দেশ প্রদানের মাধ্যমে কার্য সম্পাদনে সক্ষম। মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের একটি জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম হলো Windows.
প্রোটোকল Protocol
ভিন্ন ভিন্ন নেটওয়ার্ক সিস্টেম সমূহ পরিচালিত হয় ভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমের অধীনে, ক্ষেত্রবিশেষ হার্ডওয়্যারও ভিন্ন হতে পারে (যেমন IBM ও ম্যাক)। এ সকল নেটওয়ার্ক সিস্টেমের অপারেটিং সিস্টেম এমনকি হার্ডওয়্যার সিস্টেমের ভিন্নতা হওয়া সত্তেও ডেটা কমিউনিকেশন সম্ভব হচ্ছে। কারণ যোগাযোগের সময় দু'টি পিসি বা নেটওয়ার্ক সিস্টেম একটি অভিন্ন নিয়ম অনুসরণ করে, যা মূলতঃ নেটওয়ার্কিং প্রোটোকল। অর্থাৎ কমিউনিকেশন সিস্টেম কম্পিউটার এবং বিভিন্ন ডিভাইস বা কম্পিউটারের মধ্যে ডেটা ট্রান্সমিট পদ্ধতি সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই নিয়ন্ত্রন করার প্রক্রিয়া হচ্ছে প্রটোকল।
প্রোটোকল কী?
প্রোটোকল হচ্ছে ডেটা ট্রান্সমিশন সিস্টেমের এক SET Rules যা দুই বা ততোধিক কম্পিউটারের মধ্যে নির্ভুলভাবে ডেটা কমিউনিকেশনে সহায়তা করে।
এক কথায় নেটওয়ার্কে কম্পিউটারগুলোর জন্য সু-পরিকল্পিতভাবে নির্ধারিত রীতি-নীতি হচ্ছে নেটওয়ার্ক প্রোটোকল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের প্রোটোকল তৈরি করেছে। যেমনঃ- TCP/IP, FTP, IPX/SPX, NETBEUI, APPLETALK, ETHERNET ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে ইন্টারনেটে ব্যাবহৃত প্রোটোকল হলো TCP/IP
আরো পড়ুন
ডেটা এনক্রিপশন কী? What is data encryption
যে সকল গোপনীয় ডেটা পাবলিক পথ দ্বারা স্থানান্তরিত হয় তাদেরকে সাধারনত বিশেষ কোডের মাধ্যমে এনক্রিপ্ট করে প্রেরণ করা হয়। অর্থাৎ ডেটার গোপনীয়তা রক্ষা বা সিকিউরিটির জন্য ডেটাকে এনক্রিপ্ট করা হয়। ফলে ঐ ডেটাকে অন্য কোন অনির্দিষ্ঠ (Unauthorized) ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাবহার করতে পারেনা।
উৎস বা প্রেরক ডেটাকে এনক্রিপ্ট করলে প্রাপক বা গন্তব্য ঐ এনক্রিপ্টেড ডেটা ব্যাবহারের পূর্বে ডিক্রিপ্ট (Decrypt) করে। প্রেরককে এনক্রিপ্ট করার নিয়ম এবং প্রাপককে ডিক্রিপ্ট করার নিয়ম জানতে হয়। এনক্রিপ্টেড ডেটাকে একই পদ্ধতি বা অ্যালগরিদম ব্যাবহার করে ডিক্রিপ্ট করে অরিজিনাল ম্যাসেজে পরিবর্তন করা হয়। উদাহরণ স্বরুপ এনক্রিপ্ট করার একটি পদ্ধতি সিজার কোডের কথাই ধরা যাক, সিজার কোডে কোন অক্ষরকে তার পরিবর্তীত ৩য় অক্ষর দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়। কাজেই JULIA ROBERT এর এনক্রিপ্টড সাইফারটেক্সট হলো MWPLD TQETHV
এনক্রিপশনের মূল চারটি অংশ রয়েছেঃ- যথা
- প্লেন্টেক্সট (Plaintext)
- সাইফারটেক্সট (Ciphertext)
- এনক্রিপশন অ্যালগরিদম (Encryption Algorithom)
- কী (Key)
প্লেইন্টেক্সট
সাইফার
এনক্রিপশন এলগরিদম
কী
এনক্রিপশন করার কারণ কী?
- গোপন কী এনক্রিপশন (Secret Key Encryption) বা সিমেট্রিক এনক্রিপশন (Symmectric Encryption)
- পাবলিক কী এনক্রিপশন (Public Key Encryption) বা অ্যাসিমেট্রিক এনক্রিপশন (Asymmectric Encryption)
What is Mail Server? ই-মেইল সার্ভার
ই-মেইল সার্ভার হলো নেটওয়ার্কের একটি কম্পিউটার যা একটি ভার্চুয়াল পোস্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। মেইল সার্ভারে সাধারণত পর্যাপ্ত যায়গা বা স্টোরেজ থাকে যাতে ঐ নেটওয়ার্কের সকল ব্যাবহারকারীদের ই-মেইল জমা রাখতে পারে।
সাধারণত পোস্টাল সিস্টেম কোন চিঠি কোথাও পাঠাতে চাইলে তা পোস্ট বক্সে রাখা হয়। নির্ধারিত বিরতিতে পোস্ট বক্স থেকে চিঠিগুলো স্থানীয় পোস্ট অফিসে জমা হয়। স্থানীয় পোস্ট অফিস থেকে চিঠিগুলো তাদের ঠিকানা অনুসারে প্রাপকের এলাকায় পোস্ট অফিসে পাঠানো হয়। প্রাপকের এলাকার পোস্ট অফিসের ডাকপিয়ন চিঠিগুলো প্রাপকের নিকট বিতরণ করে থাকেন।
মেইল সার্ভার বা ভার্চুয়াল পোস্ট অফিসে সাধারণত এই কাজগুলো ঘটে থাকে। এই কাজ গুলো সুসম্পন্ন করার জন্য মেইল সার্ভার POP বা IMAP এবং SMTP প্রটোকল ব্যাবহার কএয়া হয়।
POP কাকে বলে?
POP এর পুর্নরুপ হলো Post Office Protocol. মেইল সার্ভার থেকে মেইল গ্রহণ বা রিসিভ করার জন্য এই প্রটোকল ব্যাবহার করা হয়। ব্যাবহারকারী যে সকল মেইল গ্রহণ করে বা তার কাছে আসে সেগুলোকে অর্ন্তমুখী বা ইনকামিং (Incoming) মেইল বলা হয়।
POP3 কাকে বলে?
POP3 হলো POP প্রটকোলের সর্বশেষ সংস্করণ বা ভার্শন। মেইল সার্ভার থেকে অর্ন্তমূখী বা ইনকামিং মেইল গ্রহণ করার জন্য সর্বাধীক জনপ্রীয় এই POP3 প্রটোকল। তবে এই একই কাজের জন্য IMAP নামে আরো একটি জনপ্রিয় প্রটোকল রয়েছে।
What is SMTP?
SMTP এর পূর্ণ রুপ হলো Simple Mail Transfer Protocol। যে সকল মেইল বাইরে পাঠানো হয় সেগুলোকে বর্হিমুখী বা আউটগোয়িং মেইল (Outgoing Mail) বলা হয়। আউটগোয়িং বা বর্হিমুখী মেইল পাঠানোর জন্য SMTP প্রটোকল ব্যাবহার করা হয়।
ইন্টারনেট প্রটোকল নেটওয়ার্কে ই-মেইল মেসেজ পাঠানোর জন্য বর্তমানে স্টান্ডার্ড প্রটোকল হিসেবে SMTP ব্যাবহার করা হয়। এই প্রটোকলের সাহায্যে মেইলে ডেটা, অডিও, ভিডিও, ভয়েস, গ্রাফিক্স এবং যে কোন ফাইল পাঠানো যায়।
E-mail Address ইমেইল ঠিকানা
ডাকযুগে চিঠি পাঠাতে হলে যেমন ঠিকানা প্রয়োজন তেমনি ইন্টারনেটে যুক্ত প্রতিটি কম্পিউটারের একটি ঠিকানা প্রয়োজন। সার্ভিস প্রোভাইডারের সাথে সংযোগ নেয়ার সময় এ ঠিকানা সরবরাহ করা হয়। ইন্টারনেটে যুক্ত প্রতিটি কম্পিউটারের ঠিকানা অন্যান্য। ইন্টারনেটের বিধি মোতাবেক এ ঠিকানা দেওয়া হয়। আজকাল পরিচিতি কার্ডে টেলিফোন ও ফ্যাক্স নাম্বারের পাশাপাশি অনেকেই ই-মেইলের ঠিকানা দিয়ে থাকেন।
ইমেইল ঠিকানায় মূলত ২ টি অংশ (user@host) থাকে। প্রথম অংশে থাকে ব্যাবহার কারীর পরিচিত বা কোন কোম্পানির নাম এবং @ দিয়ে এরপর দ্বিতীয় অংশ থাকে হোস্ট হিসেবে তথা ডোমেইন নাম।
একটি ইমেইল নাম কিভাবে বানানো হয় নিচের ছবিটি দেখলে সেই বিষয় আইডিয়া পাবেন।
Thursday, May 5, 2022
What is FTP? এফটিপি কাকে বলে?
প্রতিদিন নতুন সফটওয়্যার তৈরি হচ্ছে এবং পুনরায় সফটওয়্যারগুলো বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সিয়ে তাদের সংস্করন বা ভার্সন পরিবর্তন করছে। তেমনি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজ করতে গিয়ে নতুন নতুন সফটওয়্যারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু কম্পিউটারের ডিস্কের ধারণ ক্ষমতা সীমিত, ফলে ব্যাবহারকারীর ইচ্ছে থাকা থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব নয়।
ইন্টারনেটের এফ.টি.পি (FTP) হচ্ছে File Transfer Protocol যার সাহায্যে ইন্টারনেট ব্যাবহারকারী অন্যের কম্পিউটার থেকে ফাইল নিজের কম্পিউটারে নামিয়ে রাখতে পারে। সার্ভার থেকে কোন ফাইল বা সফটওয়্যার কম্পিউটারে নিয়ে আসাকে বলা হয় ফাইল ডাউনলোড (Download)। আর কম্পিউটার থেকে সার্ভারে কোন ফাইল বা সফটওয়্যার রাখাকে বলা হয় আপলোড (Upload).
আপ-লোড / ডাউনলোড এর জন্য সার্ভারে লগইনব (Login) করতে হয়। সার্ভারে লগইন করে আপলোড ও ডাউনলোড করা যায়। ব্যাবহারকারী ইচ্ছে করলেই সার্ভারের যে কোন স্থানে / স্থান থেকে ফাইল, সফটওয়্যার আপলোড বা ডাউনলোড করতে পারে না। সার্ভারে যে সব যায়গায় ব্যাবহারকারীকে এক্সেস দেয়া থাকবে শুধু মাত্র সেই সব যায়গায় ব্যাবহারকারী ফাইল, সফটওয়্যার, আপলোড ও ডাউনলোড করতে পারবে।
সার্ভারে এক্সেস সাধারনত ২ ভাবে দেওয়া হয়। যা নিম্নে উল্যেখ করা হলোঃ-
- প্রাইভেট এক্সেস (Private Access) এখানে শুধু নির্দিষ্ট ব্যাক্তি বা অল্প লোক (কোন প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদস্ত ব্যাক্তি) সফটওয়্যার ফাইল আপলোড ও ডাউনলোড করতে পারে।
- পাবলিক এক্সেস (Public Access) এখান থেকে যে কোন লোক সার্ভার থেকে ফাইল/সফটওয়্যার আপলোড ও ডাউনলোড করতে পারে। আমাদের দেশে সার্ভারগুলো সাধারণত ব্যাবহারকারীদের জন্য ফ্রী এক্সেস এর ব্যাবস্থা নেই। তবে বিশ্বের অনেক সার্ভার ফ্রী এক্সেসের ব্যাবস্থা আছে।
Wednesday, May 4, 2022
প্রেজেন্টেশন সফটওয়্যার
বর্তমান সময় হচ্ছে তথ্য বিনিময় এবং তথ্যের প্রবাহ অবারিত করে মানবতার কল্যাণ নিশ্চিত করার যুগ। এখন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গবেষক, শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী এবং পেশাজীবীদের মধ্যে তথ্য বিনিময় বা তথ্য আদান-প্রদানের প্রয়োজনীয়তা সর্বাধিক গুরুত্ব লাভ করছে। সকল প্রকার তথ্যের ভান্ডার সকলের জন্য সহজলোভ্য করার উদ্দেশ্যে প্রতিনিয়র সভা, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, কর্মশালা ইত্যাদির আয়োজন করা হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট সবাই তাদের নিজ নিজ কাজের ক্ষেত্রে হালনাগাদ তথ্য সম্পর্কে অবহিত থাকার সুযোগ পাচ্ছে।
সভা সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, কর্মশালা ইত্যাদিতে কম্পিউটারের সাহায্যে আকর্ষণীয় এবং কার্যকরভাবে তথ্য উপস্থাপন করার জন্য প্রধানত প্রেজেন্টেশন সফটওয়্যার ব্যাবহার করা হয়। যেমন- পাওয়ার পয়েন্ট, পিকাসা, ইম্প্রেস ইত্যাদি।
পাওয়ারপয়েন্ট হচ্ছে মাইক্রোসফট অফিসের অন্তরভুক্ত একটি জনপ্রিয় সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন। এ সফটওয়্যারটিকে প্রেজেন্টেশন সফটওয়্যার ও বলা যায়। বাংলাদেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ প্রায় সকলের সুবিধার জন্য মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট নিয়ে ছোট করে কিছু কথা নিচে উল্যেখ করছি।
পাওয়ার পয়েন্টের সাহায্যে লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও, গ্রাফ, ইত্যাদির সমন্ময়ে আকর্ষনীয়ভাবে তথ্যাদি উপস্থাপন করা যায়। প্রকৃতপক্ষে সভা, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, কর্মশালা ইত্যাদিতে কার্যকরভাবে তথ্য উপস্থাপন করার জন্য পাওয়ার পয়েন্ট সফটওয়্যারটি খুব সহজে এবং চমৎকারভাবে ব্যাবহার করা যায়। এ দিক থেকে পাওয়ার পয়েন্ট সফটওয়্যারটির বিকল্প নেই বললেই চলে। এজন্যই সভা সেমিনার বা অন্য কোন ইন্টারশীপে পাওয়ার পয়েন্ট দিয়েই প্রেজেন্টেশন এর কাজ করা হয়।
পাওয়ার পয়েন্টের এক একটি অংশকে স্লাইড (Slide) বলা হয়। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড প্রোগ্রামে যেমন একটি ফাইলের মধ্যে অনেক পৃষ্ঠা থাকে, তেমনি একটি প্রেজেন্টেশনে একাধিক স্লাইড থাকে। একাধিক স্লাইড বিশিষ্ট একটি পৃষ্ঠাকে হ্যান্ড আউটস (Handouts) বলা হয়। পরিকল্পিতভাবে একটি পাওয়ার পয়েন্টে প্রেজেন্টেশন তৈরি করার জন্য খসড়া করে নিতে হয়। এই খসড়াকে বলা হয় Slide Layout.
Tuesday, May 3, 2022
ডিজিটাল বাংলাদেশ
বর্তমান সরকার প্রথমবারের মতো ২০২২ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। একটা রক্তক্ষনীয় যুদ্ধের ভেতর দিয়ে ১৯৭১ সালে আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি, ২০২২ সালে তার অর্ধতাব্দী পুর্ণ হবে এবং সে কারণে এই সময়ের ভেতরে আমাদের প্রিয় মাতৃভঊমিকে একটি বিশেষ যায়গায় নেওয়ার একটি স্বপ্ন আমাদের সবাইকে স্পর্শ করেছিল। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ কথাটি সুধু একটি কথা হয়ে থাকেনি। এটাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্যে এই দেশের সরকার এবং সাধারন মানুষ সবাই একটি বড় উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রথমেই আমাদের জানা দরকার এনালগ ক ডিজিটাল কথাটি দিয়ে আমরা কী বোঝায়। পরিবর্তনশীল (বিচ্ছিন্ন) ডাটাকে যখন সংকেতের মাধ্যমে প্রকাশ কএয়া হয় তখন তাকে এনালগ সংকেত বলে। উদাহরনস্বরুপ আমাদের দৈনন্দিন তাপমাত্রার কথা ধরা যাক, দিনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের তাপমাত্রা অনুভুত হয়। এই অনুভুত তাপমাত্রাকে যখন সংকেতেরুপে প্রকাশ করি তখন তাকে এনালগ সংকেত বলি।
এনালগ সংকেতের সাহায্যে আমরা নির্ভুল এবং সুক্ষ তথ্য পাই না, প্রাপ্ত মানের তারতম্য থাকে। এই এনালগ সংকেতকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে দুইটি অবস্থার মাধোমে প্রকাশ করা হয়, এই অবস্থাগুলোকে অংকের (Digit) মাধ্যমে প্রকাশ করার ফলে এনালগ সংকেতের তুলনায় আরো নির্ভুল এবং সুক্ষ থেকে সুক্ষতর তথ্য পাওয়া যায়। Digit এর মাধ্যমে সংকেত প্রকাশের জন্য ব্যাবহৃত এই ধরনের সংকেতকে ডিজিটাল সংকেত বলা হয়। যেমনঃ ধর কাটাযুক্ত ঘড়ি এনালগ সংকেত প্রদর্শন করে, পিক্ষান্তরে কাটাবিহীন ঘড়ি ডিজিটাল সংকেত প্রদর্শন করে।
তবে ডিজিটাল বাংলাদেশ কথাটি শুধু কম্পিউটার প্রস্তুত দেশ হিসেবে ব্যাবহার করা হয়নি। এটি আরও অনেক ব্যাপক। ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে আসলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যাবহার করে গড়ে তোলা আধুনিক বাংলাদেশ বোঝানো হয়। সব ধরনের প্রযুক্তি ব্যাবহার করে এই দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্য মোচনের আংগিকার বাস্তবায়ন হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য। এই লক্ষ্যে পৌছানোর জন্যে আমাদের পুরাতন মানসিকতার পরিবর্তন করে ইতিবাচক বাস্তবতা এবং উদ্ভাবনী চিন্তা খুব জরুরি।
ডিজিটাল বাংলাদেশের পেছনের মূল কথাটি হচ্ছে দেশের মানুষের জন্যে গনতন্ত্র, মানবাধিকার, স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা এবং সুবিচার নিশ্চিত করা এবং সেগুলোর জন্যে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যাবহার করা। তার চূরান্ত লক্ষ্য হচ্ছে সকল শ্রেণির সব ধরনের মানুষের জীবনের মান উন্নয়ন। ডিজিটাল বাংলাদেশ রুপকল্পের বাস্তবায়নের জন্যে সরকার চারটি সুনির্দিষ্ট বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে; সেগুলো হচ্ছে- মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনগণের সম্পৃক্তত, সিভিল সার্ভিস এবং দৈনন্দিন জীবনে তথ্য প্রযুক্তি ব্যাবহার।
পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের কাজটি শুরু করেছে দেরিতে। তাই অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ যথেষ্ট পিছিয়ে আছে। অতীতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি গুরুত্ব যথাযথভাবে উপলব্দী না করলেও বর্তমানে এটি অত্যান্ত গুরুত পাচ্ছে। সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে যুক্ত হওয়ায় আমাদের দেশে এখন দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান সম্ভব হচ্ছে।
প্রযুক্তি প্রসারের একটি সুন্দর দিক রয়েছে, কোনো দেশ বা জাতির একটি নির্দিষ্ট প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকলে সব সময়েই তাদের পিছিয়ে থাকতে হয়না। বড় বড় লাফ দিয়ে (Leap Frog) অন্যদের ধরে ফেলা যায়। তাই বাংলাদেশ তার সর্বশক্তি দিয়ে সামনে এগিয়ে অন্য দেশের সমান হবার চেষ্টা করছে।
সরকারের আগ্রহের কারণে দেশে তথ্য প্রযুক্তির অবকাঠামো গড়ে উঠিতে শুরু করেছে। সারা দেশে ফাইবার অপটিক লাইন বসিয়ে প্রত্যান্ত অঞ্চল পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাত্র এক-দেড় দশক আগেও এদেশে টেলিফোনের সংখ্যা ছিল নগণ্য। এখন নির্দ্ধিধায় বলা যায় এই দেশের প্রত্যেকটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হাতের নাগালে ফোন রয়েছে।
ইউনিয়ন পর্যায় ইনফরমেশন সার্ভিস সেন্টার খোলা হয়েছে, প্রত্যন্ত এলাকায় পোস্ট অফিয়াগুলোকে ই-সেন্টারে রুপান্তরিত করে মোবাইল মানি অর্ডারের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন ইনফরমেশন সেন্টারের সাথে সাথে ডিস্ট্রিক ইনফরমেশন সেল এবমগ ন্যাশনাল ইনফরমেশন সেল দেশের অবকাঠামোতে একটা বড় সংযোজন।
ই-লার্নিং ও বাংলাদেশ
পৃথিবীতে জ্ঞান অর্জনের একটা সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি দির্ঘদিন থেকে মোটামুটি একইভাবে কাজ করে আসছিলো। তথ্যপ্রযুক্তি উন্নত হওয়ার পির প্রথমবার সেই পদ্ধতির এক ধরনের পরিবর্তন হতে শুরু করছে এবং ই-লার্নিং নামে নতুন কিছু শব্দের সাথে আমরা পরিচিত হতে শুরু করেছি। ই-লার্নিং শব্দটি ইলেক্ট্রনিক লার্নিং কথাটির সংক্ষিপ্ত রূপ এবং এটা বলতে আমরা পাঠদান করার জন্যে সিডি রম, ইন্টারনেট, ব্যাক্তিগত নেটওয়ার্ক কিংবা টেলিভিশন চ্যানেল ব্যাবহার করার পদ্ধতিকে বুঝিয়ে থাকি। মনে রাখতে হবে ই-লার্নিং কিন্তু মোটেও সনাতন পদ্ধতিতে পাঠদানের বিকল্প নয়, এটি সনাতন পদ্ধতির পরিপুরক। উদাহরণ দেওয়ার জন্যে বলা যায়, শ্রেণি কক্ষে বিজ্ঞানের একটা বিষয় পড়ানোর সময় অনেক কিছুই হয়ত হাতে কলমে দেখানো সম্ভব নয়। যেমং সুর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণ ইত্যাদি। শ্রেণিকক্ষে পাঠ দিতে দিতে শিক্ষক ইচ্ছে করলেই মাল্টিমিডিয়ার সাহায্য নিয়ে আরো সুন্দরভাবে বিষয়টি দৃশ্যমান উপস্থাপন করতে পারেন। সেটি এমনকি Interactiveg-ও হতে পারে।
বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী বিশাল। সে কারণে স্কুলের শিক্ষার্থী সংখ্যাও বিশাল। নানা ধরনের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে আমাদের স্কুলগুলোতে দক্ষ সিক্ষকের অভাব রয়েছে। লেখাপড়ার জন্যে প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ বলতে গেলে নেই। ল্যাবরেটরি অপ্রতুল, ফলে হাতে-কলমে বিজ্ঞানের এক্সপিরিমেন্ট করার সুযোগ খুব কম। এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্যে ই-লার্নিং অনেক বড় একটা ভূমিকা রাখতে পারে। দক্ষ একজন শিক্ষকের পাঠদান ভিডিও করে নিয়ে সেটি অসংখ্য স্কুলে বিতরণ করা যেতে পারে। একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে বোঝানোর জন্যে অনেক ধরনের সহায়তা প্রক্রিয়া ছাত্রছাত্রীদের দেয়া যেতে পারে। একজন শিক্ষক চাইলে নিজেই তার পাঠদানে সহায়তা করার জন্যে প্রয়োজনীয় বিষয় তৈরি করতে পারেন এবং সেটি বার বার ব্যাবহার করতে পারেন। বাংলাদেশের অনেক শিক্ষকই এটি ব্যাবহার করছেন।
সারা পৃথিবীতেই ই-লার্নিং জন্যে নানা উপকরণ তৈরি হতে শুরু করেছে। পৃথিবীর বড় বড় অনেক বিশ্যবিদ্যালয় অসংখ্য কোর্স অনলাইনে উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং যে কেউ সেই কোর্সটি গ্রহণ করতে পারে। বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের পরিক্ষা নিরিক্ষা হচ্ছে এবং অনেক সময়েই একজন সেই কোর্সটি নেয়ার পর তার হোমওয়ার্ক জমা দিয়ে কিংবা অনলাইনে পরিক্ষা দিয়ে সেই কোর্সটির প্রয়োজনীয় ক্রেডিট পর্যন্ত অর্জন করতে পারছে।
আমাদের বাংলাদেশেও এতে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা এ ধরনের বেশ কিছু ওয়েব পোর্টাল তৈরি করেছেন এবং সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ বাংলা ভাষায় সেই কোর্সগুলো গ্রহণ করতে পারে। বিশেষ করে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে প্রশিক্ষন নেয়ার উপযোগী এই ধরনের সাইটগুলো দেশে-বিদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।
আমাদের দেশে উত্তম পাঠদানের সীমাবদ্ধতা দূর করার ব্যাপারে ই-লার্নিং অনেক বড় ভূমিকা রাখিতে পারলেও আমাদের সব সময় মনে রাখতে, এটি কিন্তু কোনভাবেই প্রচলিত পাঠদানের বিকল্প নয়। প্রচলিত পাঠদানের সময় একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের সরাসরী দেখতে পারেন। তাদের সাথে কথা বলতে পারে, শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের নানাভাবে ভাব বিনিময় করতে পারে। শুধু তাই নয়, তারা পাশাপাশি একে অন্যকে সাহায্য কররে পারে, একে অন্যের সহযোগী হয়ে শিখতে পারে।
ই-লার্নিংয়ের বেলায় এই বিষয়টি সময়ই অনুপস্থিতি থাকে, পুরো প্রক্রিয়ায় মানবিক অংশটুকু না থাকায় পদ্ধতিটা যান্ত্রিক বলে মনে হতে পারে। সে কারণেই ই-লার্নিংকে সফল করতে হলে শিক্ষার্থীদের অনেক বেশি উদ্যোগী হতে হয়। আমাদের বাংলাদেশে ই-লার্নিংয়ের বড় সুযোগ আছে, কারণ অনেক বড় বড় সীমাবদ্ধ আসলেই ই-লার্নিং ব্যাবহার করে সমাধান করে ফেলা সম্ভন। তবে প্রচলিত ই-লার্নিংয়ের জন্যে ইন্টারনেটে
স্পিড প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং ই-লার্নিংয়ের শিখনসামগ্রী (Meterials) তৈরি করার প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমান সরকার গুরুত্বের সাথে এ ধরনের শিখনসামগ্রী তৈরি করছে। এতে আমাদের শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের শিক্ষা অর্জনে সক্ষম হবে।