তিনি গানিম আল মুফতাহ। কাতার বিশ্বকাপে সেরা এবং সর্বোচ্চ স্পটলাইটে এই তরুন। তিনি তাঁর শারীরিক অক্ষমতাকে শক্তিতে রুপান্তর করেছেন। দিন যাচ্ছে আর প্রতিনিয়ত নিজেকে শ্রেষ্ঠত্বের দিকে ধাবিত করছেন। গানিম জেনে গেছেন তাঁর হারাবার কিছু নেই, তাই বিশ্বজয়ের একতরফা স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজের সাহসিকতার জানান দিয়েছেন বিশ্বকে।
ছোট বেলা থেকেই গানিম আল মুফতার রয়েছে পায়ে সমস্যা। এবং সে কখনোই হাল ছারেনি বরং তৈরি করেছে সেচ্ছা সংগঠন।
কাতার বিশ্বকাপে বিয়ার বিনোদনটা ঝাঁপসা থাকলেও বাকী সব বিষয়ে বিশ্বের সর্বকালের সেরা আয়োজন হতে যাচ্ছে কাতার বিশ্বকাপ। নেতা উপনেতা শাখা নেতা কাঁচা নেতা পাকা নেতার বাংলাদেশী সংস্কৃতির সাথে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে পৌঁছে গেছে এদের সভ্যতা। আমার দেখা ২০০২ সালে কাতার এয়ারপোর্ট ছিল টিনশেডের ছোট্ট ছাউনি, এখন তো সব চোখের সামনে। মাত্র বিশ বছরের ব্যবধানে কাতার সেরা গর্জিয়াস বিশ্বকাপ আয়োজক। ২০২২ সালে এই বিশ্বকাপ খেলার ঘোষনা দেয়া বাফুফে বস দেশকে ১৯২তম স্থান উপহার দিয়েছেন, কপাল ভাল আমরা এখনো ফুটবল গোলার্ধের ভিতরেই আছি।
গানিম আল মুফতাহ বাংলাদেশের সব পর্যায়ে কারনে অকারনে বাকবাকুম করা জাতির জন্য একজন শিক্ষনীয় সুপারম্যান হতে পারেন। গানিমের অর্জন থেকে শিখতে পারলে লেকচার সর্বস্ব দুনিয়ায় আনন্দিত হবার কোন কারনও থাকবে না।
স্যালুট গানিম আল মুফতাহ- দ্যা বেসিক হিরো অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড।
একেবারে অপ্রত্যাশিত। এমন একটি ফল হবে কেউ স্বপ্নেও কল্পনা করেনি। অথচ, ভাবনারও অতীত সে ঘটনা ঘটলো আজ দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে। সৌদি আরবের কাছে ২-১ গোলে হেরে গেলো লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।
প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনাকে নিজেদের রূপেই দেখা গিয়েছিল; কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে মেসিদের দেখা গেলো সৌদি আরবের আক্রমণ ঠেকাতেই ব্যাস্ত। ৪৮-৫৩ এই মাত্র ৫ মিনিটের দুটি আক্রমণেই তছনছ হয়ে যায় আর্জেন্টিনার ডিফেন্স। এই দুটি আক্রমণ থেকেই ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা অঘটনের দুটি গোল হজম করলো লা আলবিসেলেস্তারা।
তবে, দ্বিতীয়ার্ধে সৌদি আরবের খেলা সবার মন জয় করে নিয়েছে। মনে হচ্ছিল সৌদি আরব আর্জেন্টাইনদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং আর্জেন্টিনা হয়ে গেছে সৌদি আরব।
তবুও শেষ দিকে প্রায় ১০ মিনিট এবং অতিরিক্ত (ইনজুরি টাইম) আরও ১০ মিনিট এককভাবে খেলেছে আর্জেন্টিনা। চেষ্টা ছিল একটি গোল অন্তত বের করে আনা। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের। সৌদি আরবের ডিফেন্স এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, মেসিদের একের পর এক চেষ্টা বিপলে চলে যায়। এমনকি শেষ মুহূর্তে (ইনজুরি টাইমে) আর্জেন্টিনার নিশ্চিত একটি গোল লাইনে দাঁড়িয়ে হেড করে ফিরিয়ে দেন সৌদির এক ডিফেন্ডার।
তবে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন মোহাম্মদ আল ওয়েইসিস। অসাধারণ গোলকিপিং করেছেন তিনি। আর্জেন্টিনার অনেকগুলো নিশ্চিত গোলের সুযোগ তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। উল্টো আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ সবচেয়ে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে দিয়েছেন ব্যর্থতার পরিচয়।
প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তাদের ডিফেন্সের মারাত্মক ভুলে গোল হজম করে বসে লিওনেল মেসির দল। ৪৮তম মিনিটে বাঁ-পায়ের দুর্দান্ত এক শটে লা আলবিসেলেস্তেদের জালে বল জড়ান সৌদি আরবের সালেহ আল সেহরি।
৫৩তম মিনিটে আবারও গোল। এবার সৌদি আরবের ১০ নম্বর জার্সিধারী খেলোয়াড় সালেম আল দাওসারি রদ্রিগো ডি পল এবং নিকোলাস ওতামেন্দিকে কাটিয়ে ডান পায়ের দুর্দান্ত এক শটে বল জড়ান আর্জেন্টিনার জালে।প্রথমার্ধে মোট চারবার সৌদি আরবের জালে বল জড়ায় আর্জেন্টিনা; কিন্তু অফসাইডের কারণে তিনটিই বাতিল হয়ে গেলো। পেনাল্টি থেকে করা মেসির গোলটি ছাড়া আর কোনোটিই বৈধ হলো না। ফলে, সৌদি আরবের বিপক্ষে প্রথমার্ধে ১-০ গোলেই এগিয়ে থাকলো আর্জেন্টিনা।
খেলার ৮ম মিনিটেই কর্নার কিক পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিক নেন মেসি। এ সময় বক্সের মধ্যে লিয়ান্দ্রো প্যারেদেসকে ফেলে দেন আল বুলাইহি। এরপরই ভিএআর চেক করে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।
৭ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী ফুটবলার লিওনেল মেসির এটাই শেষ বিশ্বকাপ এবং এবারই শেষ সুযোগ তার বিশ্বকাপ জয়ের। সে লক্ষ্যেই সৌদি আরবের বিপক্ষে সূচনাটা ভালোই হয়েছে বলা যায় মেসির।
তবে এই পেনাল্টির পর দারুণ একটা পরিসংখ্যানও সামনে চলে এলো। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের পর এই প্রথম পেনাল্টি থেকে গোল করলো আর্জেন্টিনা।
ম্যাচের শুরু থেকেই বল নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রভাব বিস্তার করে খেলার চেষ্টা করে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই মেসির বাঁ পায়ের দুর্দান্ত একটি শট অসাধারণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন সৌদি গোলরক্ষক আল ওয়েসিস।
৬ষ্ঠ মিনিটেই মেসির দারুণ একটি শট ঠেকিয়ে দেন সৌদি গোলরক্ষক। ৮ম মিনিটে কর্নার কিক করেন মেসি। আল ওয়েসিস পাঞ্চ করে বল ঠেকিয়ে দিলেও প্যারেদসকে ফেলে দেন আল বুলাইহি। ভিএআর চেক করে রেফারি জানালেন এটা ফাউল এবং পেনাল্টি।
২২তম মিনিটে একটি গোল করেন মেসি। কিন্তু লাইন্সম্যান আগেই ফ্ল্যাগ তুলে দাঁড়িয়ে থাকেন। জানালেন এটা ছিল অফসাইড। ২৮ মিনিটে লওতারো মার্টিনেজ গোল করেন। কিন্তু এবারও ভিএআরের কারণে দেকা গেলো তিনি ছিলেন অফসাইডে। সুতরাং গোল বাতিল। ৩৪ মিনিটে আরও একবার সৌদির জালে বল জড়ায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু তার আগেই সাইড রেফারি জানিয়ে দেন- এটা ছিল অফসাইড।