একজনের রক্তের সাথে আরেকজনের রক্ত মেশানো হলে কেন সেটি কখনো কখনো স্বাভাবিকভাবে মিশে যায় আবার কেন কখনো কখনো গুচ্ছবদ্ধ হয়ে যায়? সেটি বুঝতে হলে প্রথমে আমাদের দুটি বিষয় বুঝতে হবে, একটি হচ্ছে অ্যান্টিজেন অন্যটি হচ্ছে অ্যান্টিবডি।
অ্যান্টিজেন
ইন্তিজেন হচ্ছে বহিরাগত কোন বস্তু বা প্রোটিন যেটা আমাদের রক্তে প্রবেশ করলে আমাদের শরীরের নিরাপত্তাব্যবস্থা (Immune System) সেটাকে শরীরের জন্য ক্ষতিকর মনে করে তাকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে।
অ্যান্টিবডি
অ্যান্টিজেনকে প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের রক্ত যে পদার্থ তৈরি করে, সেটাই হচ্ছে অ্যান্টিবডি। অ্যান্টিজেন এবং তাকে প্রতিরোধ করার জন্য সৃষ্ট অ্যান্টিবডি যখন একই দ্রবণে থাকে, তখন একটি বিশেষ ধরনের বিক্রিয়া ঘটে। অ্যান্টিজেনকে আক্রমণ করার এই বিক্রিয়াকে অ্যান্টিবডি-অ্যান্টিজেন বিক্রিয়া বলা যায় এবং রক্তের মাঝে এই বিক্রিয়ায় কারণে রক্তকণিকা গুলো গুচ্ছ বদ্ধ হয়ে যায়।
কোন গ্রুপের রক্ত কাকে দেওয়া যাবে?
১৯০০ সালে ডঃ কাল ল্যান্ডস্টাইনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবিষ্কার করলেন, বিভিন্ন মানুষের রক্তের লোহিত কণিকায় দুই ধরনের অ্যান্টিজেন পাওয়া যায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই দুইটি অ্যান্টিজেনকে প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন মানুষের সিরামে (যে তরল লোহিত কণিকা ভাসমান থাকে) দুটি অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়। লোহিত কণিকায় থাকা এই দুটি অ্যান্টিজেনকে A এবং B নাম দেওয়া হয়েছে। তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ একজন মানুষের রক্তের লোহিত কণিকায় যদি A অ্যান্টিজেন থাকে তাহলে কোনভাবেই তার রক্তে A অ্যান্টিজনের অ্যান্টিবডি থাকতে পারবে না যদি থাকে তাহলে এই অ্যান্টিবডি নিজেই নিজের রক্তের লোহিত কণিকাকে আক্রমণ করে মৃত্যুর কারণ হয়ে যাবে।
A অ্যান্টিজেনের এন্টিবডি না থাকলেও, B অ্যান্টিজেনের অ্যান্টিবডি থাকে। একইভাবে যে রক্তের লোহিত কণিকায় B অ্যান্টিজেন আছে সেখানে A অ্যান্টিজানের অ্যান্টিবডি আছে।
অ্যান্টিজেন এবং তার অ্যান্টিবডির বিষয়টি বুঝে থাকলে আমরা মানুষের রক্ত কিভাবে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে সেটি বুঝতে পারব। যদি লোহিত রক্তকণিকায় A এবং B এই দুটি অ্যান্টিজেন থাকা সম্ভব হয় তাহলে আমরা রক্তকে নিচের চার ভাগে ভাগ করতে পারি।
এখন তোমরা নিজেরাই বলতে পারবে কোন মানুষের কোন গ্রুপের রক্ত দেওয়া সম্ভব।
O গ্রুপের রক্তের লোহিত কণিকায় যেহেতু কোন অ্যান্টিজেনি নেই তাকে যে কোন গ্রুপেই দেওয়া সম্ভব। সেই গ্রুপে যে অ্যান্টিবডি থাকুক কোন ক্ষতি করা সম্ভব নয় এজন্য ও গ্রুপকে বলা হয় ইউনিভার্সাল ডোনার।
আবার অন্যদিকে AB গ্রুপের রক্ত, নিজের গ্রুপ ছাড়া অন্য কোন গ্রুপকে দেওয়া সম্ভব নয় কারণ অন্য সব গ্রুপে কোন না কোন অ্যান্টিবডি আছে। এবং AB গ্রুপ দুটো অ্যান্টিজেনই থাকার কারণে যে কোন একটি বা দুটি অ্যান্টিবডিই লোহিত কণিকাকে আক্রান্ত করে গুচ্ছ বন্ধ করে দেয়।
A গ্রুপ এবং B গ্রুপের রক্ত নিজের গ্রুপ ছাড়া শুধু AB গ্রুপকে দেওয়া যেতে পারে কারণ AB গ্রুপে কোন অ্যান্টিবডি নেই, তাই A কিংবা B অ্যান্টিজেনকে আক্রান্ত করতে পারবে না।
আবার আমরা যদি গ্রহীতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি তাহলে উল্টোটা দেখতে পাবো। O গ্রুপ কারো রক্তই নিতে পারবে না কারণ অন্য কোন গ্রুপের সিরামে দুই ধরনের অ্যান্টিবডিই আছে। অন্যদিকে এবি (AB) গ্রুপ সবার রক্তই নিতে পারবে কারণ তার সিরামে কোন ধরনের অ্যান্টিবডিই নেই। এজন্য এবিকে বলা হয় ইউনিভার্সাল একসেপ্টর (Universal Acceptor).