রূহ আফজা বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত ও পাকিস্তানেও জনপ্রিয় পানীয় গুলোর মধ্যে একটি। বিশেষ করে রমজান মাস আসলেই বাংলাদেশের মুদি দোকান থেকে শুরু করে ঔষধের দোকানেও পাওয়া যায় লাল রঙের এই পানীয়টি। বর্তমানে শর্বত হিসেবে পান করা হলেও ১০০ বছরেরও বেশি ঐতিহ্যবাহী এই পানীয়টি একটা সময় ইউনানি মেডিসিন হিসেবে ব্যাবহার করা হতো। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে জানাবো রুহ আফজার ইতিহাস সম্পর্কে!
রূহ আফজার ইতিহাস
বাংলাদেশে রূহ আফজা বেশ জনপ্রিয় একটি পানীয় হওয়া সত্তেও অনেকেই হয়ত জানেনা যে রূহ আফজা প্রস্তুত কারক আদতে Hamdard বাংলাদেশ। অনেক দীর্ঘ সময় ধরে দেশেই রূহ আফজা ম্যানুফ্যাকচার করা হলেও মার্কেটিংয়ে তেমন বিশেষত্ব দেখা যায়না বিধায় অনেকেরই মনে হতে পারে এটি বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান।
যদিও রুহ আফজা এবং Hamdard এর ইতিহাস বাংলাদেশ, ভারত কিংবা পাকিস্তানের চেয়েও পুরোনো! হামদর্দের (Hamdard) শুরুটা হয়েছিলো মূলত ভারতের দিল্লিতে। হামদর্দের প্রতিষ্ঠাতা Hakim Hafiz Abdul Majeed এর জন্ম ১৮৮৩ সালে ততকালীন ভারতের পেরিফেটে। শিক্ষাজীবনের শুরুতে আব্দুল মজীদ (Abdul Majeed) পবিত্র কোরআন সম্পুর্ন মুখস্ত করেন এবং পরবর্তীতে উর্দু ও ফরাসি ভাষা শেখায় মনানিবেশ করেন। ভাষা সম্পর্কীত জ্ঞান অর্জনের পর উচ্চ শিক্ষা হিসেবে তিনি সে সময় ইউনানী চিকিৎসার উপর সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেন।
পরাশোনা শেষে ১৯০৬ সালে হাফিজ আব্দুল মজীদ ততকালীন পুরোনো দিল্লিতে স্বাধারন জনগনকে ইউনানী চিকিৎসা দেওয়ার জন্য Hamdard নামে একটি ছোট ইউনানি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন।
হামদর্দ শব্দটি মূলত ফরাসি শব্দ হাম এবং দর্দ এই ২ টি সব্দের সমন্বয় গঠিত। যার অর্থ ব্যাথার সহোযোগি। সে সময় তিনি বিভিন্ন ইউনানি ঔষধের সাহায্যে রোগীদের নানাধরনের রোগের চিকিৎসা করতেন এবং এর পাশাপাশ নিজেই নানা রোগের ভেষজো ও ইউনানি ঔষধ তৈরি করতেন। এ ধরনের ঔষধ তৈরি করতে গিয়েই ১৯০৭ সালে হাকিম হাফিজ আব্দুল মাজিদ নানা ধরনের ভেশজো ও ফলের মিশ্রণে একটি নতুন সিরাপ তৈরি করেন, যার নাম দিয়েছিলেন রুহ আফজা।
ঘন লালা রঙের এই সিরাপটি তিনি মূলত Heat Stroke, Dehydration ও Diarrhea এর মত রোগের চিকিৎসার জন্য একটি ইউনানি ঔষধ হিসেবে তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন। যদিও ঠান্ডা পানি বা দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে বেশ সুস্বাদু এবং গরমকালে ক্লান্তি দূর করতে ততকালীন ভারত বর্ষে বেশদ্রুতই শর্বত হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠে সিরাপটি। যার পরিপ্রেক্ষিতে হাফিজ আব্দুল মাজিদ তার এই পণ্যটিকে প্রোপার চ্যানেলে মার্কেটিং এর সিদ্ধান্ত নেন এবং ১৯১০ সালে মির্জানুর আহমেদ নামে একজনকে নিয়ে রূহ আফজার লোগো ডিজাইন করিয়ে নেন। তবে ততকালীন দিল্লির প্রিন্টিং প্রেস গুলো ততখানী এ্যাডভান্স না হওয়ায়, ফুল কালার কন্ট্রাস ঠিক রেখে তা প্রিন্ট করা যাচ্ছিলোনা বিধায় তারা প্রিন্টিয়ের কাজটি বম্বে থেকে করিয়ে আনেন। বিভিন্ন মার্কেটিং এক্টিভিটির কারনে রূফ আফজা নামটি সহজেই সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে যায়, এবং পন্যটি স্বাদ ও মানের দিক থেকেও ভালো হওয়ায় বেশ দ্রুতই এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।
বিশেষ করে ১৯১৫ সালে নাগাদ ততকালীন দিল্লির মুস্লিম কমিউনিটিতে রূহ আফজা বেশ ডমিনেট হয়ে উঠে।
কিন্তু রূহ আফজার এরূপ জনপ্রিয়তা হাফিজ আব্দুল মাজিদ দেখে যেতে পারেনি। ১৯২২ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি মৃত্যু বরন করেন।
Coming Soon...