Showing posts with label রচনা. Show all posts
Showing posts with label রচনা. Show all posts

Friday, January 5, 2024

বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য রচনা

বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য রচনা

বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য রচনা ২০ পয়েন্ট, বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য রচনা, SSC 2024

ভূমিকা

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত এ ছয় ঋতুর আবর্তন বাংলাদেশকে বৈচিত্র্যময় করে তোলে। প্রত্যেকটি ঋতুরই রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। এক এক ঋতু আমাদের জীবনে আসে এক এক রকম ফুল, ফল আর ফসলের সম্ভার নিয়ে। বাংলার প্রকৃতিতে ষড়ঋতুর পালাবদল আলপনা আঁকে অফুরন্ত সৌন্দর্যের। তাতে আমাদের চোখ জুড়িয়ে যায়, আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠে হৃদয়। গ্রীষ্মের দাবদাহ, বর্ষার সজল মেঘের বৃষ্টি, শরতের আলো-ঝলমল স্নিগ্ধ আকাশ, হেমন্তের ফসলভরা, মাঠ, শীতের শিশিরভেজা সকাল আর বসন্তের পুষ্প সৌরভ বাংলার প্রকৃতি ও জীবনে আনে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া। ঋতুচক্রের আবর্তনে প্রকৃতির এ সাজবদল বাংলাদেশকে রূপের রানীতে পরিণত করেছে।

ঋতুচক্রের আবর্তন

বাংলাদেশের ঋতু পরিবর্তনের মূলে রয়েছে জলবায়ুর প্রভাব ও ভৌগোলিক অবস্থান।
এ দেশের উত্তরে সুবিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালা, দক্ষিণে প্রবাহিত বঙ্গোপসাগর। সেখানে মিলিত হয়েছে হাজার নদীর স্রোতধারা। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হয় বৃষ্টি। বৃষ্টির ধারা এ দেশের মাটিকে করে উর্বর, ফুল ও ফসলে করে সুশোভিত। নদীর স্রোত বয়ে আনে পলিমাটি। সে মাটির প্রাণরসে প্রাণ পায় সবুজ বন-বনানী, শ্যামল শস্যলতা। তার সৌন্দর্যে এ দেশের প্রকৃতি হয়ে ওঠে অপরূপ। নব নব সাজে সজ্জিত হয়ে এ দেশে পরপর আসে ছয়টি ঋতু। এমন বৈচিত্র্যময় ঋতুর দেশ হয়তো পৃথিবীর আর কোথাও নেই।

ঋতু পরিচয়

বর্ষপঞ্জির হিসেবে বছরের বারো মাসের প্রতি দুই মাসে এক এক ঋতু। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ দুই মাস গ্রীষ্মকাল, আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল, ভাদ্র-আশ্বিন শরৎকাল, কার্তিক-অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল, পৌষ-মাঘ শীতকাল এবং ফাল্গুন-চৈত্র বসন্তকাল। তবে ঋতুর পালাবদল সবসময় মাসের হিসেব মেনে চলে না। তা ছাড়া ঋতুর পরিবর্তন রাতারাতি বা দিনে দিনেও হয় না। অলক্ষে বিদায় নেয় একঋতু, আগমন ঘটে নিঃশব্দে নতুন কোনো ঋতুর। প্রকৃতির এক অদৃশ্য নিয়মে যেন বাঁধা ঋতুচক্রের এই আসা-যাওয়া।

গ্রীষ্ম

ঋতু-পরিক্রমায় প্রথম ঋতু গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মে বাংলাদেশের রূপ হয়ে ওঠে রুক্ষ ও শুষ্ক। প্রচণ্ড খরতাপ আর খাঁ খাঁ রোদ্দুরে মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির হয়। নদী-নালা, খাল-বিল শুকিয়ে যায়। কখনো তপ্ত বাতাসে যেন আগুনের হলকা ছুটতে থাকে। ক্লান্তি আর তৃষ্ণায় বুক শুকিয়ে আসে পথিকের। কখনো উত্তর-পশ্চিম আকাশের কোণে কালো হয়ে মেঘ জমে। হঠাৎ ধেয়ে আসে কালবৈশাখী ঝড়। বছরের পুরোনো সব আবর্জনা ধুয়ে মুছে যায়। জ্যৈষ্ঠ আসে ফলের সম্ভার নিয়ে। আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, লিচু ইত্যাদি নানারকম মৌসুমি ফলের সমারোহ গ্রীষ্মঋতুকে করে তোলে রসময়।

বর্ষা

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহের পর আসে বর্ষা। আকাশে দেখা দেয় সজল-কাজল মেঘ। অঝোর ধারায় নামে বৃষ্টি। পৃথিবীতে প্রাণের সাড়া জাগে। আষাঢ়-শ্রাবণের বর্ষণে জেগে ওঠে বৃক্ষলতা। কখনো একটানা বৃষ্টিতে খাল-বিল, পুকুর-নদী সব কানায় কানায় ভরে ওঠে। বর্ষার পল্লিপ্রকৃতি তখন এক অপরূপ সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয়। সে রূপ ধরা পড়েছে রবীন্দ্রনাথের কবিতায়:
নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে। বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর আউশের খেত জলে ভরভর কালি-মাখা মেঘে ওপারে আঁধার ঘনিয়েছে দেখ চাহি রে।
বর্ষায় বাংলাদেশের নিচু এলাকাগুলো পানিতে ডুবে যায়। নদীতে দেখা দেয় ভাঙন। বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দেয় বন্যা। এমনকি শহরাঞ্চলও জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বর্ষায় গরিব মানুষের দুঃখ-কষ্ট বেড়ে যায়। মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়।

শরৎ

শরৎ বাংলাদেশের এক ঝলমলে ঋতু। বর্ষার বৃষ্টি-ধোয়া আকাশ শরতে হয়ে ওঠে নির্মল। তাই শরতের আকাশ থাকে নীল। শিমুল তুলোর মতো সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায় আকাশে। এ সময় শিউলি ফুল ফোটে, নদীর তীরে ফোটে সাদা কাশফুল। নির্মল আকাশে শরতের জ্যোৎস্না হয় অপরূপ ও মনোলোভা। ঘাসের বুকে শিশিরের মৃদু ছোঁয়ায় স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে শরতের সকাল।

হেমন্ত

হেমন্ত বাংলাদেশের ফসল-সমৃদ্ধ ঋতু। তখন সোনালি ফসলে সারা মাঠ ভরে থাকে। কৃষকের মুখে থাকে হাসি। কাস্তে হাতে পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত থাকে কৃষক। নতুন ফসল ওঠায় ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্নের উৎসব। পাকা ধানের সোনালি দৃশ্য সত্যি মনোমুগ্ধকর। সন্ধ্যা ও সকালে চারদিকে ঘন হয়ে কুয়াশা নামে। এসময় থেকে শীতের আমেজ পাওয়া যায়।

শীত

শীত বাংলাদেশের এক হিমশীতল ঋতু। শীত আসে কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে। শীতে বিবর্ণ হয়ে গাছের পাতা ঝরে পড়ে। সকাল হলেও অনেক সময় সূর্যের মুখ দেখা যায় না। শীতে জড়সড় হয়ে যায় মানুষ ও প্রাণিকুল। শীতের প্রচণ্ডতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবাই গরম কাপড় পরে। দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীতের প্রকোপ থাকে বেশি। শীতে বেশি কষ্ট পায় আশ্রয়হীন, শীতবস্ত্রহীন দরিদ্র মানুষ। শীত কেবল হিমশীতল বিবর্ণ ঋতু নয়। শীতকালের প্রকৃতি নানারকম শাকসবজির সম্ভার নিয়ে আসে। গ্রামবাংলায় এ সময় খেজুর রস ও পিঠা-পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে যায়।

বসন্ত

বসন্তকে বল হয় ঋতুরাজ। শীতের রুক্ষ, বিবর্ণ দিন পেরিয়ে বসন্ত আসে বর্ণিল ফুলের সম্ভার নিয়ে। বাংলার নিসর্গলোক এ সময় এক নতুন সাজে সজ্জিত হয়। পুষ্প ও পল্লবে ছেয়ে যায় বৃক্ষশাখা, গাছে গাছে আমের মুকুল আর ফুলে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন শোনা যায়। মৃদুমন্দ দখিনা বাতাস আর কোকিলের কুহুতান বসন্তের এক অপরূপ মাধুর্য সৃষ্টি করে।

উপসংহার

বাংলাদেশ বিচিত্র সৌন্দর্যের লীলাভূমি। ঋতু পরিক্রমায় এখানে দেখা যায় বৈচিত্র্যময় রূপ। গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতি, বর্ষার জলসিক্ত জীবন, শরতের কাশফুল, হেমন্তের নবান্নের উৎসব, শীতের কুয়াশামাখা সকাল আর বসন্তের পুষ্প-পল্লব ষড়ঋতুর ভিন্ন ভিন্ন রূপ বাংলাদেশকে করেছে বিচিত্ররূপিণী। প্রকৃতির এমন বৈচিত্র্যময় রূপ পৃথিবীর আর কোথাও কি আছে?

Thursday, January 4, 2024

স্বদেশ প্রেম রচনা

স্বদেশ প্রেম রচনা

মানুষ স্বাভাবিকভাবেই তার জন্মস্থানকে ভালোবাসে। জন্মস্থানের আলো-জল-হাওয়া, পশু-পাখি, সবুজ প্রকৃতির সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জন্মস্থানের প্রতিটি ধূলিকণা তার কাছে মনে হয় সোনার চেয়েও দামি। সে উপলব্ধি করে-
মিছা মণি মুক্তা-হেম স্বদেশের প্রিয় প্রেম তার চেয়ে রত্ন নাই আর। মানুষের এই উপলব্ধিই হচ্ছে স্বদেশপ্রেম।
স্বদেশপ্রেমের সংজ্ঞার্থ: স্বদেশপ্রেম অর্থ হচ্ছে নিজের দেশের প্রতি, জাতির প্রতি, ভাষার প্রতি গভীর আকর্ষণ অনুভব করা। দেশের প্রতি প্রবল অনুরাগ, নিবিড় ভালোবাসা এবং যথার্থ আনুগত্যকে দেশপ্রেম বলে। জন্মভূমির স্বার্থে সর্বস্ব ত্যাগের সাধনাই স্বদেশপ্রেম।

স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ

স্বদেশ অর্থ নিজের দেশ। নিজের দেশকে সবাই ভালোবাসে। মাকে যেমন সবাই নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে, তেমনি স্বদেশের প্রতিও সবার ভালোবাসা সকল স্বার্থের ঊর্ধ্বে। প্রত্যেক মানুষেরই কথায়, চিন্তায় ও কাজে প্রকাশ পায় স্বদেশের প্রতি নিবিড় মমত্ববোধ। এই বোধ বা চেতনা হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত। তাই এডউইন আর্নল্ড বলেছিলেন, ‘জীবনকে ভালোবাসি সত্যি, কিন্তু দেশের চেয়ে বেশি নয়।’ সংস্কৃত শ্লোকে আছে: “জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী।” অর্থাৎ জননী ও জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।

স্বদেশপ্রেমের অনুভূতি

দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ থেকে জন্ম হয় স্বদেশপ্রেমের। পৃথিবীর সব জায়গার আকাশ, চাঁদ, সূর্য এক হলেও স্বদেশপ্রেমের চেতনা থেকে মানুষ নিজের দেশের চাঁদ-সূর্য-আকাশকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে ভালোবাসে। স্বদেশপ্রেমের অনুভূতি সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হয় দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হলে। তখন স্বদেশপ্রেমের প্রবল আবেগে মানুষ নিজের জীবন দিতেও দ্বিধা করে না। কেননা সে জানে, দেশের জন্য ‘নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।

ছাত্রজীবনে স্বদেশপ্রেম

ছাত্ররাই দেশের ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। দেশের উন্নতি ও জাতির আশা পূরণের আশ্রয়স্থল। তাই দেশ ও জাতির প্রতি গভীর মমত্ববোধ ছাত্রজীবনেই জাগিয়ে তুলতে হবে। দেশকে ভালোবাসার উজ্জীবন মন্ত্রে দীক্ষিত হতে হবে। ছাত্রদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে পারলেই দেশের স্বার্থে প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করার আগ্রহ সৃষ্টি হবে। তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হবে বিদ্রোহী কবির বাণী:
আমরা রচি ভালোবাসার আশার ভবিষ্যৎ, মোদের স্বর্গ-পথের আভাস দেখায় আকাশ-ছায়াপথ। মোদের চোখে বিশ্ববাসীর স্বপ্ন দেখা হোক সফল। আমরা ছাত্রদল।

বাঙালির স্বদেশপ্রেম

পৃথিবীতে যুগে যুগে অসংখ্য দেশপ্রেমিক জন্মেছেন। তাঁরা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করে অমর হয়ে আছেন। বাংলাদেশেও তার অজস্র দৃষ্টান্ত রয়েছ। প্রাচীনকাল থেকে এ দেশে বিদেশি শক্তি প্রভুত্ব বিস্তারের চেষ্টা করেছে, আর স্বদেশপ্রেমিক বাঙালি দেশের স্বাধীনতা ও সম্মান রক্ষার্থে অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে।

১৯৫২ সালে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের হাতে বাংলা-ভাষার জন্য রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, বরকতের আত্মদান দেশপ্রেমের ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে।


১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মদান করেছে অসংখ্য ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, মা-বোনসহ সাধারণ মানুষ। অকুতোভয় শত-সহস্র এ সৈনিকের দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এখনো এ দেশের লক্ষকোটি জনতা দেশের সামান্য ক্ষতির আশঙ্কায় বজ্রকণ্ঠে গর্জে ওঠে।

স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম

স্বদেশপ্রেম মূলত বিশ্বপ্রেমেরই একটি অংশ। কেননা বিশ্বের সব মানুষই পৃথিবী নামক এই ভূখণ্ডের অধিবাসী। তাই স্বদেশপ্রেমের মাধ্যমে সকলেরই বিশ্বভ্রাতৃত্ব, মৈত্রী ও বিশ্বমানবতাকে উচ্চকিত করে তুলতে হবে। কারণ বিশ্বজননীর আঁচল-ছায়ায় দেশজননীর ঠাঁই। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেজন্যই গেয়েছেন-
ও আমার দেশের মাটি, তোমার ’পরে ঠেকাই মাথা, তোমাতে বিশ্বময়ীর - তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা

উপসংহার

দেশপ্রেম একটি নিঃস্বার্থ ও নির্লোভ আত্মানুভূতি। কোনো প্রকার লোভ বা লোভের বশবর্তী হয়ে দেশকে ভালোবাসা যায় না। প্রকৃত দেশপ্রেমিকের কাছে দেশের মঙ্গলই একমাত্র কাম্য। দেশের জন্য তাঁরা সর্বস্ব দান করতে পারেন।

তাঁদের শৌর্য-বীর্য ও চারিত্রিক দৃঢ়তা আবহমানকাল ধরে জাতিকে প্রেরণা জোগায়। কাজেই ব্যক্তিস্বার্থ নয়, দেশ ও জাতির স্বার্থকে সবার ওপরে স্থান দিতে হবে। দেশ গড়ার কাজে, দেশের জন্য মঙ্গলজনক কাজে আমাদের সকলকে নিবেদিতপ্রাণ হতে হবে।

সর্বোপরি দেশকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে সমগ্র বিশ্বকে ভালোবাসতে শিখতে হবে। তবেই অর্জিত হবে স্বদেশপ্রেমের চূড়ান্ত সার্থকতা।

শ্রমের মর্যাদা রচনা

শ্রমের মর্যাদা রচনা

কর্মই জীবন। সৃষ্টির সমস্ত প্রাণীকেই নিজ নিজ কাজের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে হয়। ছোট্ট পিঁপড়ে থেকে বিশাল হাতি পর্যন্ত সবাইকেই পরিশ্রম করতে হয়।

পরিশ্রম দ্বারাই মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে নিজেকে আলাদা করেছে। পরিশ্রমের মাধ্যমেই মানুষ নিজের ভাগ্য বদলেছে। আর বহু বছরের শ্রম ও সাধনা দ্বারা পৃথিবীকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করে তুলেছে। বলা যায়, মানুষ ও সভ্যতার যাবতীয় অগ্রগতির মূলে রয়েছে পরিশ্রমের অবদান।


শ্রম কী

শ্রমের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে মেহনত, দৈহিক খাটুনি। সাধারণত যেকোনো কাজই হলো শ্রম। পরিশ্রম হচ্ছে এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সংগ্রামের প্রধান হাতিয়ার। পরিশ্রমের দ্বারাই গড়ে উঠেছে বিশ্ব ও মানবসভ্যতার বিজয়-স্তম্ভ।

শ্রমের শ্রেণিবিভাগ: শ্রম দুই প্রকার: মানসিক শ্রম ও শারীরিক শ্রম। শিক্ষক, ডাক্তার, বৈজ্ঞানিক, সাংবাদিক, অফিসের কর্মচারী শ্রেণির মানুষ যে ধরনের শ্রম দিয়ে থাকেন সেটিকে বলে মানসিক শ্রম। আবার কৃষক, শ্রমিক, তাঁতি, জেলে, মজুর শ্রেণির মানুষের শ্রম হচ্ছে শারীরিক শ্রম। পেশা বা কাজের ধরন অনুসারে এক এক শ্রেণির মানুষের পরিশ্রম এক এক ধরনের হয়। তবে শ্রম শারীরিক বা মানসিক যা-ই হোক না কেন উভয়ের মিলিত পরিশ্রমেই গড়ে উঠেছে মানবসভ্যতা।

শ্রমের প্রয়োজনীয়তা

মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্যবিধাতা। তার এই ভাগ্যকে নির্মাণ করতে হয় কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে। তাই মানবজীবনে পরিশ্রমের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কর্মবিমুখ অলস মানুষ কোনো দিন উন্নতি লাভ করতে পারে না। পরিশ্রম ছাড়া জীবনের উন্নতি কল্পনামাত্র।

জীবনে আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ করতে হলে নিরলস পরিশ্রম দরকার। পৃথিবীতে যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী, সে জাতি তত বেশি উন্নত। তাই ব্যক্তিগত ও জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে মানুষকে পরিশ্রমী হতে হবে। একমাত্র পরিশ্রমই মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তুলতে পারে।

শ্রমের মর্যাদা

মানুষের জন্ম স্রষ্টার অধীন, কিন্তু কর্ম মানুষের অধীন। জীবন-ধারণের তাগিদে মানুষ নানা কর্মে নিয়োজিত হয়। কৃষক ফসল ফলায়, তাঁতি কাপড় বোনে, জেলে মাছ ধরে, শিক্ষক ছাত্র পড়ান, ডাক্তার চিকিৎসা করেন, বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেন। এঁরা প্রত্যেকেই মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। পৃথিবীতে কোনো কাজই ছোট নয়। আর্থসামাজিক পদমর্যাদায় হয়তো সবাই সমান নয়। কিন্তু এদের প্রত্যেকেরই মেধা, মনন, ঘাম ও শ্রমে সভ্যতা এগিয়ে চলেছে।


তাই সকলের শ্রমের প্রতিই আমাদের সমান মর্যাদা ও শ্রদ্ধা থাকা উচিত। উন্নত বিশ্বে কোনো কাজকেই তুচ্ছ করা হয় না। সমাজের প্রতিটি লোক নিজের কাজকে গুরুত্ব দিয়ে করার চেষ্টা করে। তাই চীন, জাপান, কোরিয়া, রাশিয়া, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স, কানাডা প্রভৃতি দেশ উন্নতির চরম শিখরে উঠেছে। আমাদের দেশে শারীরিক শ্রমকে বিশেষ মর্যাদার চোখে দেখা হয় না। তার ফলে আজও সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা দেশের অধিবাসী হয়েও আমরা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করি।

পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি

সৌভাগ্য আকাশ থেকে পড়ে না। জীবনে সৌভাগ্য অর্জনের জন্য প্রচুর পরিশ্রম ও নিরন্তর সাধনার দরকার হয়। সব মানুষের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা আছে। পরিশ্রমের দ্বারা সেই সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে হয়। যে মানুষ কর্মকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছে, জীবনসংগ্রামে তারই হয়েছে জয়।
কর্মের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি জীবনে সফল সৈনিক হতে পারে। কর্মহীন ব্যক্তি সমাজের বোঝাস্বরূপ। অন্যদিকে শ্রমশীলতাই মানবজীবনের সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। আমাদের জীবনে উন্নতি এবং সুখ বয়ে আনতে হলে পরিশ্রমের বিকল্প নেই।

উপসংহার

পরিশ্রম শুধু সৌভাগ্যের নিয়ন্ত্রক নয়, সভ্যতা বিকাশেরও সহায়ক। মানবসভ্যতার উন্নতি-অগ্রগতিতে শ্রমের অবদান অনস্বীকার্য। আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন ও সাধনা আমাদের।

তাই কোনো ধরনের শ্রম থেকে আমাদের মুখ ফিরিয়ে থাকলে চলবে না। শ্রমে বিজয়-রথে চড়ে আমাদের উন্নত সভ্যতার সিংহদ্বারে পৌঁছতে হবে।