আমরা সবাই জানি, তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতার দরুন আজকের যুগে আমরা নিজের ঘরের কোণে বসে নিজস্ব ছোট্ট কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে একটি বিশালাকার কম্পিউটারকে ভাড়ার মাধ্যমে যথেচ্ছা ব্যবহার করতে পারি এবং আমাদের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সেই কম্পিউটারে সংরক্ষণও করতে পারি। এই বিশালাকার কম্পিউটারের ধারণাটিই ক্লাউড কম্পিউটিং।
আজকের এই আর্টিকেলে "ক্লাউড কম্পিউটিং কী?" এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
{getToc} $title={Table of Contents}
ক্লাউড কম্পিউটিং কি
আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিগত সবকিছুই চলছে এই ক্লাউড কম্পিউটিং ধারণার উপর ভিত্তি করে। 'ক্লাউড' শব্দটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে যে কোনো ব্যবহারকারী পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের সুবিশাল তথ্যভান্ডার দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহার এবং সংরক্ষণ করতে পারেন।
Cloud Computing
আমরা বর্তমানে যারা কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করি তাদের প্রায় সবারই Facebook, E- mail বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একাউন্ট রয়েছে। আমরা ইচ্ছানুযায়ী এসব একাউন্টের মাধ্যমে স্টেটাস দিচ্ছি কিংবা মেইল আদান-প্রদান করে থাকি। এসব সেবা গ্রহণের জন্য আমাদেরকে কোনো টাকা খরচ করতে হয় না। কেননা, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এইসব সার্ভিস বা সেবা প্রদানকারী বেশকিছু কোম্পানীর বিপলু সংখ্যক সার্ভার রয়েছে, যার মাধ্যমে তারা অসংখ্য ক্লায়েন্টকে একই সময়ে সার্ভিস প্রদান করে যাচ্ছেন। আবার কিছু সংখ্যক সার্ভিস রয়েছে যেগুলো অর্থের বিনিময়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সেবা দান করে থাকেন।
ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভিস
বিনামূল্যের এবং অর্থের বিনিময়ে উভয় প্রকার সার্ভিস ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের অন্তর্গত। এক্ষেত্রে কম্পিউটার রিসোর্স যেমন- হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্ক ইত্যাদি সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে থাকে, ক্রেতা বা ব্যবহারকারী নিজস্ব কম্পিউটার ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সার্ভিসদাতা সার্ভারের সাথে সংযোগ স্থাপন করে প্রয়োজনীয় কম্পিউটিংয়ের কাজ সমাধা করে থাকে। ক্লাউড কম্পিউটিংকে কোনো সুনির্দিষ্ট টেকনোলজি হিসেবে গণ্য করা হয় না, এটি মূলত একটি ব্যবসায়িক মডেল, যার দ্বারা ব্যবহারকারী এবং সার্ভিস প্রদানকারী উভয়ই ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হয়ে থাকেন।
ক্লাউড কম্পিউটিং পদ্ধতিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
যথা-
১। প্রাইভেট ক্লাউড Private Cloud
একক প্রতিষ্ঠান নিজস্ব মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় কিংবা থার্ড পার্টির ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয় যাতে অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, এ ধরনের ক্লাউডকে প্রাইভেট ক্লাউড বলে। এ সব পরিচালনা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, তবে অনেক বড়ো প্রতিষ্ঠানের অনেক শাখায় ডেটা সেন্টার না বসিয়ে একটিমাত্র ক্লাউড ডেটা সেন্টার স্থাপন করলে প্রতিষ্ঠানটির জন্য সাশ্রয়ী হয়।
২। পাবলিক ক্লাউড Public Cloud
জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ক্লাউডকে পাবলিক ক্লাউড বলে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত সকলের বিনামূল্যে বা স্বল্প ব্যয়ে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত অ্যাপ্লিকেশন, স্টোরেজ এবং অন্যান্য রিসোর্স ইত্যাদির সার্ভিসযুক্ত ক্লাউড-ই পাবলিক ক্লাউড। Amazon, Microsoft এবং Google ইত্যাদি তাদের নিজস্ব ডেটা সেন্টারে পাবলিক ক্লাউডের অবকাঠামো স্থাপন ও পরিচালনা করার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস প্রদান করে থাকে।
হাইব্রিড ক্লাউড Hybrid Cloud
দুই বা ততোধিক ধরনের ক্লাউড (প্রাইভেট, পাবলিক বা কমিউনিটি) - এর সংমিশ্রণই হলো হাইব্রিড ক্লাউড। বিভিন্ন ধরনের ক্লাউড পৃথক বৈশিষ্ট্যের হলেও এক্ষেত্রে একই সাথে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করে। ক্লাউড সার্ভিসের ক্ষমতাবৃদ্ধির জন্য একাধিক ক্লাউডকে একীভূত করা হয়ে থাকে।
ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের সুবিধা Advantages of Cloud Computing
ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভিসদাতা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস প্রদান করে থাকে। এ সব সার্ভিস মডেলকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
অবকাঠামোগত সেবা IaaS: Infrastructure as a service
এই মডেলে অবকাঠামো ভাড়া দেওয়া হয়। অ্যামাজন -এর ইলাস্টিক কম্পিউটিং ক্লাউড (EC2) এরকম একটি মডেল। EC2 -এর প্রতিটি সার্ভারে 1 থেকে 4 টি ভার্চুয়াল মেশিনে চলে, ক্রেতারা এগুলোই ভাড়া নিয়ে থাকেন। ব্যবহারকারীরা ভার্চুয়াল মেশিনে নিজেদের ইচ্ছেমতো অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করে নিজের নিয়ন্ত্রণে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার চালাতে পারেন।
প্ল্যাটফর্মভিত্তিক সেবা PaaS: Platform as a service
এই মডেলে ভার্চুয়াল মেশিন ভাড়া না দিয়ে ভাড়া দেওয়া হয় কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত অপারেটিং সিস্টেম, প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ এক্সিকিউশন পরিবেশ, ডেটাবেজ এবং ওয়েব সার্ভার ইত্যাদি। এই প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারী স্বল্প ব্যয়ে তার অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার উন্নয়ন করতে পারেন। Microsoft -এর Azure এবং Google -এর App Engine এই মডেলের উদাহরণ।
সফটওয়্যারভিত্তিক সেবা SaaS: Software as a service
এই মডেলে ব্যবহারকারীরা সার্ভিসদাতা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করা সফটওয়্যার ও ডেটাবেজে অ্যাকসেস এবং ব্যবহারে সুযোগ পায়। এর ফলে ব্যবহারকারীকে সিপিইউ বা স্টোরেজের অবস্থান, কনফিগারেশন ইত্যাদি জানা বা রক্ষণাবেক্ষণ করার প্রয়োজন হয় না।
এ ছাড়াও ক্লাউড সার্ভিসের ব্যবহারকারীরা নিচের সুবিধাগুলো ভোগ করে থাকে:
যত চাহিদা তত সার্ভিস Resource Flexibility/Scalability
ছোট কিংবা বড় যে কোনো ক্রেতার সব রকম চাহিদা মেটানো হবে, ক্রেতা যত চাইবে সার্ভিসদাতা তত পরিমাণে সার্ভিস দিতে পারবে। ক্রেতা তার ইচ্ছে অনুযায়ী চাহিদা বাড়াতে বা কমাতে পারবে।
যখন চাহিদা তখন সার্ভিস On Demand
ক্রেতা যখনই চাইবে সার্ভিসদাতা তখনই সার্ভিস দিতে পারবে। ক্রেতা যে সময় ইচ্ছে সার্ভিস চাইতে পারবে এবং সে সময়ই সার্ভিসদাতা তার চাহিদা পূরণ করবে।
যখন ব্যবহার তখন মূল্য শোধ Pay as you go
ক্রেতাকে আগে থেকেই কোনো সার্ভিস রিজার্ভ করতে হবে না। ক্রেতা যতটুকু ব্যবহার করবে, শুধু ততটুকুর জন্যই মূল্য পরিশোধ করবে।
উদ্যোক্তাদের সুযোগ Opportunity for Entrepreneurs
সার্বক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য ক্লাউড সার্ভিস ছোট ও প্রাথমিক উদ্যোক্তাদের জন্য সহজেই ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। যে কোনো সময়, যে কোনো জায়গা থেকে ডেটা আপলোড ও ডাউনলোড করা যায়। নিজস্ব হার্ডওয়্যার খুব বেশি প্রয়োজন হয় না। শুধু তাই নয়, স্বয়ংক্রিয়ভাবে সফটওয়্যার আপডেট হয় বলে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, লাইসেন্স ফি ইত্যাদির জন্য বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় না। পরিচালনা ব্যয় কম এবং স্বল্প সংখ্যক ও প্রশিক্ষণবিহীন জনবল দিয়েও অনেক কাজ করা যায়।
ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে পৃথিবীর প্রযুক্তির জগতে একটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে সত্যি কিন্তু একই সাথে এটি তথ্যের জগতে বিশাল নিরাপত্তার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। এই সার্ভিসে আপলোড করা তথ্য কোথায় সংরক্ষিত এবং প্রক্রিয়াকরণ হয়, তা ব্যবহারকারী জানতে পারে না। সেই তথ্য বা ডেটার উপর এবং প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যারের উপর ব্যবহারকারীর একক নিয়ন্ত্রণ থাকে না। বলা বাহুল্য তথ্যের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা কম।