পরমাণুর নিউক্লিয়াসের বাইরে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান অথবা পরমাণু থেকে মুক্ত হওয়া ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট মৌলিক কণাকে ইলেকট্রন বলে। আজকের আর্টিকেলে জানাবো ইলেকট্রন কত প্রকার ও কি কি! তাই সবাই মোনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ুন।
অণু ও পরমাণুর সংজ্ঞা
পৃথিবীর সকল পদার্থই কতগুলি ক্ষুদ্র কণার সমষ্টি মাত্র। এ কণার নামই অণু । মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের যে ক্ষুদ্রতম কণা ঐ পদার্থের ধর্মাবলি অক্ষুণ্ণ রেখে স্বাধীনভাবে বিরাজ করতে পারে, তাকে ঐ পদার্থের অণু বলা হয় । অণুসমূহ খালি চোখে দেখা যায় না । পদার্থের অণুতে ঐ পদার্থের গুণাবলি বিদ্যমান থাকে। বিভিন্ন পদার্থের অণুতে পরমাণুর সংখ্যাও বিভিন্ন হয়। পানির অণুতে পানির সকল গুণ বিদ্যমান থাকে। যেমন— ২টি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং ১টি অক্সিজেন পরমাণু দ্বারা পানির ১টি অণু গঠিত হয়। অনুরূপভাবে, একটি নাইট্রোজেন পরমাণু এবং তিনটি হাইড্রোজেন পরমাণু যুক্ত হয়ে একটি অ্যামোনিয়ার অণু গঠন করে।
পরমাণু
অণুর ক্ষুদ্রতম কণাই পরমাণু। কোনো মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম অংশ যার মধ্যে ঐ মৌলের বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ থাকে, যা স্বাধীনভাবে অবস্থান করতে পারে না কিন্তু রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে তাকে ঐ মৌলের পরমাণু বলা হয়। সাধারণত একটি মৌলিক পদার্থ একই ধরনের অসংখ্য পরমাণু দিয়ে গঠিত । তবে, ভিন্ন ভিন্ন মৌলিক পদার্থ ভিন্ন ভিন্ন পরমাণু দিয়ে গঠিত। হাইড্রোজেনের একটি অণুতে হাইড্রোজেনের ২টি পরমাণু এবং অক্সিজেনের একটি অণুতে অক্সিজেনের ২টি পরমাণু থাকে। পরমাণুকে ভাঙলে ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন নামক অতি ক্ষুদ্র কণিকা পাওয়া যায়।
পরমাণুর গঠন
প্রাচীনকালে ধারণা ছিল পরমাণু অবিভাজ্য। কিন্তু কালক্রমে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে পরমাণু বিভাজ্য । এটি সূক্ষ্ম কণিকার সমষ্টি । পদার্থের ৩টি ক্ষুদ্র কণিকা হচ্ছে- (ক) ইলেকট্রন, (খ) প্রোটন ও (গ) নিউট্রন।
পরমাণুর কণিকাসমূহের অবস্থান নিম্নে দেখানো হলো-
সৌরজগতের সাথে পরমাণুর গঠন তুলনা করা যায়। সৌরজগতের কেন্দ্র যেমন সূর্য, তেমনি পরমাণুর কেন্দ্রকে নিউক্লিয়াস বলা হয়। নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রন থাকে। ইলেকট্রন বাইরের কক্ষপথে অবস্থান করে । প্রতিটি পরমাণুতে ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংখ্যা সমান থাকে। ইলেকট্রন বা প্রোটনের সংখ্যাই পারমাণবিক সংখ্যা। প্রোটনের সংখ্যা ও নিউট্রনের সংখ্যার সমষ্টি দ্বারা পারমাণবিক ওজন নির্ণয় করা হয় । কোনো কক্ষপথে পরমাণুর কয়টি ইলেকট্রন থাকবে তা নির্ণয় করার জন্য E=2n2 সূত্রটি ব্যবহার করা হয় । এখানে n হলো কক্ষপথের সংখ্যা বা number এবং E হলো মোট ইলেকট্রন সংখ্যা । উদাহরণস্বরূপ
১ম কক্ষপথের জন্য n = 1; E=2x12=2x1 = 2
২য় কক্ষপথের জন্য n = 2; E = 2 x 2 2 = 2 x 4 = 8
৩য় কক্ষপথের জন্য n = 3; E = 2 x 3 2 = 2 ×9=18
তবে যে কোনো পরমাণুর সর্বশেষ কক্ষে ৮টির বেশি ইলেকট্রন থাকবে না এবং যে কোনো কক্ষে ১৮টির বেশি ইলেকট্রন থাকবে না.
ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রনের বৈশিষ্ট্য
ইলেকট্রন (Electron)
ইলেকট্রন হচ্ছে পরমাণুর ক্ষুদ্রতম কণিকা যা নিউক্লিয়াসের চারদিকে কক্ষপথে ঘুরে এবং নেগেটিভ চার্জ বহন করে । ইলেকট্রনের সংকেত । এর ভর 9.1×10-31 কেজি; বিদ্যুৎ মাত্রা 4.8029×10-10 ইএসইউ(ESU) এবং ব্যাসার্ধ 1.4×10-15 মিটার (প্রায়)।
প্রোটন
প্রোটন হচ্ছে পরমাণুর একটি ক্ষুদ্রতম কণিকা যা পরমাণুর কেন্দ্রে অবস্থান করে। প্রোটন ধনাত্মক চার্জ বহন করে, যার ভর 1.673×10-27 কেজি, বিদ্যুৎমাত্রা +4.8029×10-10 ইএসইউ এবং ব্যাসার্ধ 1.4×10-15 মিটার (প্রায়)।
নিউট্রন (Neutron)
নিউট্রন হচ্ছে বিদ্যুৎ নিরপেক্ষ একটি ক্ষুদ্রতম কণিকা যা পরমাণুর কেন্দ্রে অবস্থান করে । এর ভর 1.673×10-27 কেজি এবং ব্যাসার্ধ 1.4×10-15 মিটার (প্রায়)। পরমাণুর কেন্দ্রকে নিউক্লিয়াস বলে। প্রোটন ও নিউট্রন দ্বারা নিউক্লিয়াস গঠিত। পরমাণুতে ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংখ্যা সমান থাকে কিন্তু প্রোটন ও নিউট্রনের ভর সমান থাকে। পরমাণুর ইলেকট্রন বা প্রোটনের সংখ্যাকে পারমাণবিক সংখ্যা এবং প্রোটন বা নিউট্রনের ভরকে পারমাণবিক ভর বলা হয়।