পারমাণবিক বিদ্যুতের যুগে বাংলাদেশ! দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। যেটা স্থাপন করা হয়েছে পাবনার রুপপুরে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে থাকা ২ টি ইউনিট থেকে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদ হবে। দেশে জলবিদ্যুৎ, কয়লা বিদ্যুৎ ও গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকলেও, প্রথম বারের মত! পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ যাবে ঘরে ঘরে।
ইউরেনিয়াম দিয়ে কিভাবে বিদ্যুৎ তৈরি হয়?
কনটেন্ট সূচিপত্র: ইউরিনিয়াম দিয়ে কিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়?
ইউরেনিয়াম একটি মৌলিক পদার্থ। ইউরেনিয়ামের রাসায়নিক প্রতীক U এবং পারমাণবিক সংখ্যা ৯২! অর্থাৎ একটি ইউরেনিয়াম পরমাণুতে ৯২টি প্রোটন এবং ৯২টি ইলেকট্রন রয়েছে, এরমধ্যে ৬টি যোজ্যতা ইলেকট্রন।
ইউরেনিয়াম দুর্বলভাবে তেজস্ক্রিয় কারণ ইউরেনিয়ামের সকল আইসোটোপ পরিবর্তনশীল। এর প্রাকৃতিকভাবে ঘটা আইসোটোপের অর্ধায়ু ১,৫৯,২০০ বছর থেকে ৪৫০ কোটি বছরের মধ্যে। প্রাকৃতিক ইউরেনিয়ামের সবচেয়ে সাধারণ আইসোটোপগুলি হল ইউরেনিয়াম-২৩৮ (যার মধ্যে ১৪৬ নিউট্রন রয়েছে এবং পৃথিবীর ইউরেনিয়ামের ৯৯% এর বেশি এই আইসোটোপ) এবং ইউরেনিয়াম-২৩৫ (যাতে ১৪৩ নিউট্রন রয়েছে), মূলত ইউরেনিয়াম ২৩৫ দিয়েই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এর ঘনত্ব সীসার তুলনায় প্রায় ৭০% বেশি এবং সোনা বা টাংস্টেনের তুলনায় কিছুটা কম। এটি প্রাকৃতিকভাবে মাটি, শিলা এবং পানিতে প্রতি মিলিয়নে কয়েক অংশের কম ঘনত্বে পাওয়া যায় এবং বাণিজ্যিকভাবে ইউরেনিয়াম-যুক্ত খনিজ যেমন ইউরেনাইট থেকে নিষ্কাষণ করা হয়।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউরেনিয়ামের কাজ কি?
পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে তুলনামূলক স্বল্প পরিমাণে জ্বালানি থেকে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদ সম্ভব। এর জন্যই সারা বিশ্বে পারমাণবিক বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে।
কিন্তু কি প্রক্রিয়ায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এই বিদ্যুৎ উতপন্ন হয়?
পৃথিবীর অনেক যায়গায় ইউরেনিয়াম পাওয়া যায়। স্বল্প পরিমাণে পাথর বা শীলাতে এমনকি সমুদ্রের পানিতেও ইউরেনিয়াম পাওয়া যায়।
ব্যবহার যোগ্য ইউরেনিয়াম মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্ষণিতে আহরণ করা হয়।
পৃথিবীতে যে পরিমাণে ইউরেনিয়াম উত্তলন করা হয়, তার ৮৫% কাজাখস্তান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নামিবিয়া, নাইজার ও রাশিয়ার বিভিন্ন ক্ষনি থেকে পাওয়া যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এই ক্ষণিজের সন্ধান পাওয়া গেছে।
ইউরেনিয়াম কি বাংলাদেশে আছে
বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালে মৌলভিবাজারের জুরি উপজেলার হারাগাছা পাহারে প্রথম ইউরেনিয়ামের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ পরমাণু শক্ত কমিশন সিলেটের জয়িন্তাপুরে ইউরেনিয়ামের সন্ধান পায়।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের প্রধান জ্বালানি হচ্ছে "ইউরেনিয়াম ২৩৫" ইউরেনিয়াম হচ্ছে তেজস্ক্রিয় ধাতু ও উচ্চ ঘনত্বের মৌল। ৪৫০০ টনের উচ্চ গ্রেডের কয়লা থেকে যে পরিমানে শক্তি উতপন্ন হয়, একি পরিমাণে শক্তি মাত্র ১ কেজি ইউরেনিয়াম থেকে পাওয়া সম্ভব৷ এছাড়া কার্বনডাইঅক্সাইড নিস্বরণও কম হয়।
ইউরেনিয়াম দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি হয় কিভাবে
ইউরেনিয়াম থেকে উৎপাদিত শক্তি দিয়ে পানিকে বাষ্পে পরিণত করা হয়। এরপর ঐ বাষ্প দিয়ে টারবাইন ঘোরানোর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উতপাদনই হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎ।
নিউক্লিয়ার রিয়াক্টর কি
নিউক্লিয়ার রিয়াক্টর বা পারমাণবিক চুল্লি এক ধরনের তাপিয় যন্ত্র। এটিই পারমাণবিক বিদ্যুত কন্দ্রের প্রধান অংশ! এর মাধ্যমে প্রথমে পারমাণবিক জ্বালানি ইউরেনিয়াম ২৩৫ এর চেইন বিক্রিয়া ঘটিয়ে অত্যাধিক তাপ শক্তি উত্তপন্ন করা হয়।
নিউক্লিয়ার চেইন বিক্রিয়া
নিউক্লিয়ার চেইন বিক্রিয়ায় ইউরেনিয়ামের নিউট্রোন কণাতে আঘাত করা হয়, এর ফলে আরো দুটি ইলেকট্রন কণা নির্গত হয়। যা অন্য ইউরেনিয়াম পরমাণুকে আঘাত করে। এভাবে নিউট্রন কণা ইউরেনিয়াম পরমাণুকে ক্রমাগত আঘাত করে ভাঙার ফলে প্রচুরপরিমানে শক্তি নির্গত হয়!
তবে ইউরেনিয়াম ২৩৫ কে উচ্চগতিসম্পন্ন অবস্থায় সহজে আঘাত করা যায়না। আঘাতের জন্য এর গতিবেগ কমিয়ে নিতে হয়। আর এই কাজটি করে মডারেটর।
আর কোর হচ্ছে রিয়াক্টরের প্রধান অংশ। এটি জ্বালানি দন্ডে অভিবাচিত জ্বালানি দন্ড গুলোকে চাপ দিয়ে।মিশিয়ে দেয়। এভাবে চুল্লিতে প্রচুর তাও শক্তি উতপন্ন হয়।
পরামাণু দিয়ে বিদ্যুৎ
উতপাদিত তাপ চুল্লিতে ব্যবহৃত Coolant উত্তপ্ত রাখে। কোল্যান্ট থেকে এই তাপ হিট এক্সচেঞ্জারে চলে যায়! তখন হিট এক্সচেঞ্জার পানিকে বাষ্পে পরিণত করে। আর অবিশিষ্ট পানি শীতল হয়ে পাম্পের সাহায্যে চুল্লিতে চলে যায়।
হিট এক্সচেঞ্জারে উৎপাদিত বাষ্প প্রচন্ড গতিতে স্টিম টারবাইনকে আঘাত করলে, ঘুর্ণায়ন গতি সৃষ্টি করে। আর যেহুতু টারবাইনের শেফট এবং অল্টারনেটর একই সাথে শেফটের সাথে যুক্ত থাকে সেহুতু ঘুর্ণিয়নের ফলে অলটারনেটরও ঘুরতে থাকে। এর ফলে অলটারনেটর থেকে বৈদ্যুতিক শক্তি উত্তপন্ন হতে থাকে।
টারবাইন থেকে বিতারিত বাষ্প কনডেন্সারে চলে যায়, সেখান থেকে বাষ্প ঘনিবত হয়ে ফিড ওয়াটার পাম্পের সাহায্যে হিট এক্সচেঞ্জারে চলে যায়।
আর অলটারনেটিরে যে বিদ্যুৎ শক্তি উতপাদন হচ্ছে তা সাব স্টেশনে দেওয়া হয়। এরপর ট্রান্সফরমার, সার্কিট ব্রেকার ও আইসিলেটরের মাধ্যমে গ্রাহকের নিকট বিদ্যুৎ পৌছে যায়।