বীজ একটি মৌলিক কৃষি উপকরণ। বীজের মাধ্যমে উদ্ভিদের বংশ বিস্তার ঘটে। উদ্ভিদ বিজ্ঞান অনুযায়ী পরিপক্ব নিশিক্ত ডিম্বককে (Mature Fertilized Ovule) বীজ বলে। আমরা জানি উদ্ভিদের অনান্য অঙ্গ ব্যবহার করেও বংশ বিস্তার সম্ভব। কৃষিতত্ত্ব এগুলোকেও বীজ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কৃষিবিদগণ কৃষিতাত্ত্বিক বীজ বলেন আর নিষিক্ত পরিপক্ব ডিম্বাককে বলা হয় সত্যিকার বীজ (True Seed) বা যৌন বীজ (Sexual Seed)। বীজের মাধ্যমে উদ্ভিদের অঙ্গ ব্যবহার করা হল্প তার গুণাগুন পরবর্তী বংশধরে প্রকাশ ঘটতে পারে। অপর দিকে যৌনে বীজে মাতা ও পিতা উভয়ের গুণের একটি যৌক্তিক মিশ্রণ নিয়মানুসারে ঘটে। এ ক্ষেত্রে অসুবিধা এই যে আত্মা-নিষিক্ত (Self fertilized) না হলে, মা গাছের সকল গুণাগুণ পরবর্তী প্রজন্মে নাও পাওয়া যেতে পারে। তবে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে দুইটি আলাদা জাতের (একই ফসলের) মধ্যে সংকরায়ন (Hybridization) ঘটিয়ে তৃতীয় জাত তৈরি করা যায় যাতে মাতার কিছু এবং পিতার কিছু ভালো গুণের সমাহার ঘটতে পারে। এইভাবে বীজের বংশগতিগত (Genetic) উন্নয়ন সম্ভব, যাকে বলা হয় সংকরায়ন।
কৃষক চাষাবাদের জন্য উন্নত গুণাগুণসম্পন্ন উচ্চ ফলনশীল জাতের উন্নত বীজ ব্যবহার করে লাভবান হতে চায়। কৃষি গবেষণা সংস্থাগুলো বীজ উন্নয়নের কাজ করে, বীজ প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ উন্নতজাতের বীজের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় এবং বি.এ.ডি.সি (BADC)-এর মতো রাষ্ট্রীয় কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বিভিন্ন স্বীকৃত প্রতিনিধির মাধ্যমে কৃষকদের উন্নত বীজ সরবরাহ করে। চলতি কোনো ফসলের জাতের প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কিছু কাঙ্ক্ষিত গুণের ভিত্তিতে ক্রমাগত বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও বীজের উন্নতি বা জাতের উন্নতি ঘটানো যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে উন্নয়নকে বলা হয় চয়ন-প্রজনন (Selection Breeding)। পর্যবেক্ষণ ও বাছাই এখানে মূল কৌশল। সংকরায়ণের পরও বেশ কয়েক প্রজন্ম (Generation) পর্যবেক্ষণ ও বাছাই করা হয়।
চাষি পর্যায়ে উন্নত বীজ নির্বাচনের আগে আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় নিতে হয় । যেমন-
- চাষির কৃষি পরিবেশ অঞ্চলের জন্য ফসলের কোন কোন জাত উপযুক্ত।
- ঐ জাতগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে কম সময়ে ফলন দেয়।
- ঐ জাতগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে কম খরচে সবচেয়ে বেশি ফলন দিতে পারে ।
- কোন জাতটির রোগ-বালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি ।
- কোন জাতটির মাঠ পরিচর্যা সহজতর।
- মিশ্রণহীন বীজ
- অন্তত ৮০% অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা সম্পন্ন
- চারার উচ্চমানের সতেজতা
- পরিচ্ছন্নতা
- সুস্থ বীজ (রোগজীবাণুর দূষণ ও সংক্রমণমুক্ততা)