ফ্রিল্যান্সারদের জন্য লোকাল কমুনিটি, আজকের এই আর্টিকেলটি ফেসবুক থেকে এক ভাই পাঠিয়েছেন এবং এতে তার জীবনে ঘটে যাওয়া ফ্রীল্যান্সিং যগতের অনেক কিছু উল্লেখ আছে। অনুগ্রহ সবাই মনযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়বেন।
ফ্রিল্যান্সিং করছি ২০১৪ সাল থেকে, সত্যি বলতে ফ্রিল্যান্সিং লাইফের প্রথম ৫ বছর আমার চারপাশে কোন ফ্রিল্যান্সার আছে কিনা বা এলাকায় ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কে কি করছে সেটা কখনো মাথায় আনিনি। নিজের মত শুধু কাজ করেই গিয়েছি। শুধু সুযোগ পেলে ঢাকায় ফ্রিল্যান্সারদের প্রগ্রামগুলোতে এটেন্ড করেছি। লেখালেখির সুত্র ধরে পুরা বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গার ফ্রিল্যান্সারদের সাথে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ থাকলেও, অবাক ব্যাপার হচ্ছে, নিজের এলাকায় আমাকে কেউ তেমন চিনত না, এমনকি আমার নিজ জেলা ময়মনসিংহের ফ্রিল্যান্সারদের কারো সাথে তেমন যোগাযোগ ছিল না। একটু অন্তর্মুখী টাইপের বলে, কোন কালেই আমার বন্ধুবান্ধব তেমন ছিল না। সৌভাগ্যক্রমে ঢাকার একটা প্রোগ্রাম থেকে আমাদের ময়মনসিংহের ফ্রিল্যান্সার সুবর্ণ ইসলাম ভাইকে বন্ধু হিসাবে পাই, মাত্র ১ বছরের চলাফেরায় তিনি হয়ে ওঠেন আমার সব থেকে কাছের বন্ধু। নিজেদের সুখদুঃখ আনন্দ বেদনা এক সাথে ভাগাভাগি করে নিতাম, এক সাথে ঘুরতে যেতাম, প্রচুর সময় এক সাথে কাটিয়েছি। বলায় যায় তার সাথে আমার প্রায় ৯০% মিল ছিল।
১৯শে জুলাই ২০১৯ সালে তিনি আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নেন। আমি পুরাপুরি একা হয়ে পড়ি, এর পরে শুরু হয় কভিডের লকডাউন, বাড়ীতে থাকতে থাকতে একাকীত্ব প্রচন্ডভাবে পেয়ে বসে। তখন থেকেই নিজের এলাকায় ফ্রিল্যান্সারদেরকে খোঁজ করা শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ্ বেশ কিছু ফ্রিল্যান্সার ভাই ব্রাদারকে খুজে পাই। তাদের কয়েকজনের সাথে সরাসরি দেখা করি এবং ঠিক করি যে লোকাল ফ্রিল্যান্সার এবং ফ্রিল্যান্সিংএ আগ্রহীদেরকে নিয়ে একটু কমুনিটী করার। এবং আপনাদের দোয়ায় আমার নিজ এলাকা ফুলবাড়ীয়া, ময়মনসিংহে একটা লোকাল কমুনিটি গঠন করি, এবং দুই মাস আগে আমাদের বৃহত্তর ময়মনসিংহের সব জেলা নিয়ে বড় একটা গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়েছে। মাত্র দেড় বছরের পথ চলায় আমদের এত অর্জন এবং অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, ভাবলাম এটা নিয়ে আলাদা ভাবে লেখা দরকার। আমার বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে ফ্রিল্যান্সারদের লোকাল কমুনিটির গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা শুরু করছি।
নতুন বন্ধুত্বের সন্ধানেঃ
সুবর্ণ ইসলাম ভাইকে হারানোর বেদনায় অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু আল্লাহর রহমতে এই লোকাল কমুনিটির কল্যানে অনেকগুলো ভাই ব্রাদার পেয়েছি, যারা আমার নিজের ভাইয়ের মত। তাদের জন্য কিছু করতে আমার যেমন ভাল লাগে, তেমনি ভাবে আমিও অনুভব করি তারা আমাকে কতটা ভালবাসে। লোকাল কমুনিটি করার পর এটা আমার বড় প্রাপ্তি। আমরা ফ্রিল্যান্সারের মুলত চার দেয়ালে বদ্ধ জীবনযাপন করি, ফলে আমাদের বাস্তব জীবনের বন্ধু থেকে ভার্চুয়াল বন্ধু বেশি। কিন্তু বিশ্বাস করেন, বাস্তব জীবনের একজন প্রকৃত বন্ধু ফেসবুকের হাজারো ভার্চুয়াল বন্ধুর থেকে বেশি কাজে আসে। আমার সাথে একজন ফ্রিল্যান্সারের ৭ বছর ধরে যোগাযোগ ছিল, নিজেকে তার অনেক কাছের একজন মনে করতাম। কিন্তু কিছুদিন আগে আমার এক পোষ্টের সুত্র ধরে তিনি আমাকে ইসলাম বিরোধী আখ্যা দিয়ে আনফ্রেন্ড করে দেন। অথচ আমাদের মধ্যে যদি বাস্তব যোগাযোগ থাকত, তবে আমার মনে হয় আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে তিনি ১০০ বার ভাবতেন। তিনি আমাকে যেমনটা মনে করেছেন, আমি আসলে তেমনটা মোটেও না। সত্যি বলতে এসব বায়বীয় ভার্চুয়াল বন্ধুত্বের কোন মূল্য নেই। তাই লোকাল কমুনিটী গঠন করুন বাস্তবের বন্ধুত্ব তৈরি করুন, বিপদে আপদে সব সময় তাদেরকে পাশে পাবেন।
আনন্দময় সময়ের জন্যঃ
আগেই বলেছি আমরা প্রকৃত ফ্রিল্যান্সারেরা একটা বোরিং লাইফ যাপন করি। সেদিন একজন ফ্রিল্যান্সার ভাইয়ের কথা শুনে কষ্ট লাগছিল, তিনি সপ্তাহে ৫ দিন বেশ কিছু কোম্পানিতে ভার্চুয়াল সার্ভিস দেন। সারারাত কাজ করেন, সারাদিন ঘুমান। শনি রবি দুই দিন ছুটি, এই দুই দিন তিনি পার্কে যেয়ে মন খারাপ করে বসে থাকেন। অথচ তিনি জানতেনই না তার আশে পাশেই অনেক ফ্রিল্যান্সার আছে, এমনকি তার অফিস থেকে ৫ মিনিটের হাটা দূরত্বে, একটা ফ্রিল্যান্সিং অফিস আছে সেটাও জানতেন না। কমুনিটী গঠন হবার পরে আস্তে আস্তে সব জেনেছেন এবং অবাক হয়েছেন। এখন তার আর বোরিং সময় কাটাতে হয় না। এখন আমরা কেউ কোথাও গেলে, নিজেদের
মেসেঞ্জার গ্রুপে নক দেই, ৪/৫ জন একত্রিত হই, চা কফির সাথে ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে তুমুল আড্ডা চলে। সময়গুলো অনেক সুন্দর কাটে। আপনারাও এটা ফলো করতে পারেন, সময়গুলো অনেক আনন্দে কাটবে।
নলেজ শেয়ারিং
আগেই বলেছি যে যে কোন ফ্রিল্যান্সিং আড্ডা মানে নলেজ শেয়ারিং। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে সামনে অনেক বড় বড় চ্যালেঞ্জ আসছে। মিডীয়াতে বলা হচ্ছে ২০২৩ সালে পুরা বিশ্ব মহামন্দার দিকে ধাবিত হবে, এতে অনেকে চাকরি হারাবে বা কাজের সুযোগ কমে যাবে। এছাড়া Articial Intellence (AI) এর ব্যাবাহার বহুগুনে বেড়ে যাবে। যার প্রভাব ইতিমধ্যে আমরা ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে দেখতে পাচ্ছি। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে টিকে থাকতে হলে নিজেকে আপগ্রেডের কোন বিকল্প নেই। লোকাল কমুনিটির মাধ্যমে আমরা একে অপরের সাথে সহজেই নলেজ শেয়ারিং এর মাধ্যমে লেটেস্ট বিষয় সম্পর্কে জানতে পারছি। কোন একজনের কাছে থেকে পাওয়া সামান্য একটা ইনফরমেশন আপনার চিন্তা ধারণাকেই পুরোপুরি পরিবর্তন করে দিতে পারে। এইজন্য লোকাল কমিউনিটির গুরুত্ব অপরিসীম, নিজেদের মধ্যে নলেজ শেয়ারিংএর মাধ্যমে আমরা একে অপরকে হেল্প করতে পারি।
সৃষ্টির সেবায়
আমরা সবাই সৃষ্টির সেবায় নিজেকে নিবেদন করতে চাই। একা একা কোনো ভালো কিছু করা খুবই কঠিন। লোকাল কমিটির মাধ্যমে আমরা অনেক বড় বড় কাজ সবাই মিলে করতে পারি। আমাদের কমিটিতে ইতিমধ্যে আমরা ব্লাড ব্যাংক গঠন করেছি। এবং ইতিমধ্যে আমাদের লোকাল কমুনিটীর কয়েকজনকে হেল্পও করতে পেরেছি। কিছুদিন আগে আমাদের কমিটির এক ভাই আমাদের এলাকায় এসেছিলেন তার বোনের চিকিৎসার জন্য। আমাদের লোকাল ফ্রিল্যান্সিং কমুনিটীর মেম্বারেরা তাদের আন্তরিকতা দিয়ে তাদের সর্বচ্চ চেস্টা করেছে। আমাদের কমিউনিটি থাকার কারনেই এটা সম্ভব হয়েছে। আরো উদাহরণ দিতে পারি, গত কয়েক মাস আগের সিলেট বিভাগের বন্যার সময়, আমরা আমাদের লোকাল কমুনিটীর মাধ্যমে বন্যাদুর্গত এলাকায় প্রায় ৩২০টি পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছিলাম, আমাদের অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সবাই মিলে যদি একত্রিত না হতাম, তাহলে এত বড় একটা প্রোগ্রাম আমরা কোনমতেই করতে পারতাম না। গত রোজার ঈদের সময় আমরা ঈদ উপহার হিসেবে বেশ কিছু দরিদ্র পরিবারকে ঈদের বাজার ঈদ উপহার দিয়েছিলাম। আমাদের শক্তিশালী লোকাল কমুনিটি আছে বলেই অন্তত কিছু দরিদ্র পরিবারের মাঝে আমরা হাসি ফোটাতে পেরেছি। এর জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি। এই বছর হয়ত মাত্র ২৩টী পরিবারের জন্য ঈদ উপহারের ব্যাবস্থা আমরা করতে পেরেছি। পরের ঈদে যেন শত পরিবারের মধ্যে ঈদ উপহার বিবতরন করতে পারি এই জন্য সবার নিকট দোয়াপ্রার্থী। ফ্রিল্যান্সারদের অনেকেই নিয়মিত যাকাত দেন এবং সাধ্যমত দান করেন, তাদের এই দানের টাকা একত্রিত করে অনেক বড় কিছু করা সম্ভব। সামনে শীতকাল আসছে তীব্র শীতে অনেক অসহায় মানুষজন কষ্ট পাবেন, আমরা লোকাল কমিটির মাধ্যমে আমাদের দরিদ্র মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে পারি, কম্বল বিতরণ করতে পারি। ফ্রিল্যান্সারদের লোকাল কমিটির মাধ্যমে সহজেই এমন অনেক ভালো ভালো কাজ করা সম্ভব, যেটা ব্যাক্তি উদ্যোগে করা সম্ভব না।
আনন্দ ভ্রমণে
লোকাল কমিউনিটির অন্যতম বড় একটা আকর্ষণ হচ্ছে বিভিন্ন আনন্দভ্রমণে সবাই একত্রিত হওয়া। আমরা আমাদের লোকাল কমুনিটি থেকে ইতিমধ্যে অনেকগুলো ছোট ছোট আনন্দ ভ্রমনের আয়োজন করেছি, আমরা আমাদের জেলার আশপাশের দর্শনীয় অনেকগুলো স্থান পরিদর্শন করেছি, বাকিগুলো দ্রুত ভ্রমনের ইচ্ছা আছে। আমাদের কমুনিটী থেকে নৌকাভ্রমণে করেছি, রাতে ক্যাম্পিং করেছি, জংগলের মাঝে রিসোর্টে থেকেছি, বারবিকিউ পার্টী করেছি, ডে লং ট্যুর করেছি। এসব প্রোগ্রামগুলোতে যে পরিমাণ মজা হয়েছে, সেগুলো আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আসলে এসব আনন্দ ভ্রমণে আমরা খুবই আনন্দ করেছি এবং শুধু তাই না নিজেদের ভিতর নলেজ আইডীয়া শেয়ার করেছি, আমাদের ভাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় হয়েছে। তাই এরকম এলাকা ভিত্তিক ছোট ছোট লোকাল কমিটি গঠনের মাধ্যমে, আপনারাও দেশের আনাচে-কানাচে বিভিন্ন এলাকায় ট্যুর দিতে পারেন। এই শীতে আমাদের বেশ কিছু ট্যুর প্লান আছে, এছাড়া বছরব্যাপী আমাদের কমুনিটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন ট্যুরের আয়োজন করা হবে, আপনাদেরকে অগ্রিম আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখলাম। আপনার এলাকায় যদি আমরা আসি তবে আশা করি আপনাদের সাথে দেখা হবে এবং আপনাদের কাছ থেকে হেল্প পাব। আমাদের এলাকাতেও আপনাদের সাদর আমন্ত্রণ রইল।
মিটাপ প্রোগ্রামে
ফ্রিল্যান্সারদের লোকাল কমিউনিটির আরেকটা বড় আনন্দের জায়গা হচ্ছে বিভিন্ন মিটাপ। এমনিতেই ঢাকাতে বড় বড় ফ্রিল্যান্সার মিটাপ হয়, তবে ঢাকার বাহিরে বড় মিটাপ খুব একটা হয় না। তবে আপনাদের এলাকার লোকাল ফ্রিল্যান্সার কমুনিটী গঠন করার মাধ্যমে আপনারা ছোট ছোট মিটাপের আয়োজন করতে পারেন। আমরা আমাদের লোকাল কমিটির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে অনেকগুলো ছোট ছোট মিটআপ করেছি। গত রোজায় আমরা বড় আকারের ইফতার মাহফিল করেছিলাম প্রায় ৭৫ ফ্রিল্যান্সার এবং ফ্রিল্যান্সিংএ আগ্রহীদের নিয়ে খুবই সফল সে প্রোগ্রাম ছিল। সামনের রোজাতেও ইফতার মাহফিল করার ইচ্ছা আছে। আমরা ঈদ পুনর্মিলনী উপলক্ষে নৌকা ভ্রমন আয়োজন করেছিলাম। সামনের ডিসেম্বারে আমাদের বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং বাংলাদেশের সকল ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে, ফ্রিল্যান্সার কমুনিটীকে নিয়ে বড় আকারের একটা মিটাপ হতে যাচ্ছে। আপনাদের অগ্রিম আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখলাম। এসব মিটাপে আমরা ফ্রিল্যান্সিং এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি, আমাদের সমস্যা এবং সম্ভবনা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এসব মিটাপ থেকে আমাদের ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনাগুলো সাজিয়েছে নিয়েছি। এসব মিটাপকে বলা যায় আমাদের লোকাল কমুনিটীর প্রাণ। এখান থেকে আমরা অনেক ভালো কিছু পেয়েছি, আপনারাও এটা ফলো করতে পারেন।
বিনিয়োগে
ফ্রিল্যান্সারদের প্লান B নিয়ে আজ থেকে চার বছর আগে আমি পোস্ট দিয়েছিলাম, কারণ হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং এমন একটা অনিশ্চিত পেশা যেটাকে বাঁধাধরা বেতনের চাকরির সাথে তুলনা করা যায় না। আজকে কেউ হয়তো কেউ খুব ভালো করছে কিন্তু আগামীতে সে যে ভালো করবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই, যে কারো যে কোনো সময় আর্থিক অনিশ্চিয়তা আসতে পারে, এজন্য আমি সবসময় বলি আপনার পালন B রেডি রাখতে। অর্থাৎ কোন কারনে আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়াতে কোন সমস্যা হলে আপনি যেন প্লান B এর মাধ্যমে টিকে যেতে পারেন। অনেকে আছেন ব্যাংকে টাকা রেখে মুনাফা বা সুদ খেতে চান না, কোথাও টাকা বিনিয়োগ করে হালাল ইনকাম করতে চান। তাদের জন্য লোকাল কমুনিটী একটা আদর্শ প্লাটফর্ম হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি আমার জানা মতে ঢাকায় এবং ঢাকার বাহিরে অনেক ফ্রিল্যান্সারেরা গ্রুপ করে জমিতে বিনিয়োগ করছেন এবং শুধু তাই নয় সে জমি কিনে সেই জমিতে ফ্লাট নির্মাণ শুরু করেছেন। এটা এখন হালাল বিনিয়গের বেশ ভাল একটা মডেল। এবং এখান থেকে ভাল পরিমানে মুনাফা হালাল ভাবে পাওয়া সম্ভব। যেহেতু ছোট লোকাল কমুনিটীতে সবাই সবার সাথে পরিচিত এবং সবার সাথে একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক বিদ্যমান কাজেই আমি মনে করি এখানে চাইলেই সম্মিলিত বিনিয়োগের মাধ্যমে ভাল কিছু করা সম্ভব। তাই আপনারা লোকাল কমিউনিটিতে বেশ কয়েকজন একত্রিত হয়ে একটা নীতিমালা তৈরি করে সেখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে আপনারা শহরের ভিতরে বা শহরের আশপাশে জমি কিনে রেখে দিতে পারেন। পরবর্তীতে সেই জমির দাম বেড়ে গেলে জমি বিক্রি করে ভালো পরিমাণ মুনাফা পেতে পারেন। শুধু তাই না সেই জমিতে আপনারা ফ্ল্যাট বানিয়ে বিক্রি করে সেখান থেকে ভালো ইনকাম করতে পারেন এবং এটা পুরোপুরি হালাল। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ করে আপনারা ব্যবসা করতে পারেন, যেমন রেন্ট এ কারের ব্যাবসা। নিজেদের ভিতরে যদি নীতিমালা ঠিক থাকে, তাহলে ইনশাআল্লাহ আশা করা যায় আপনারা ভাল কিছু করতে পারবেন।
কাজের হেল্পে
নিজের কাজে হেল্প লোকাল কমিউনিটি বিশাল একটা ভূমিকা রাখতে পারে। হতে পারে আপনি একজন ওয়েব ডেভেলপার, ডিজিটাল মার্কেটার, গ্রাফিক ডীজাইনার বা ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের যে বিষয়ের একজন এক্সপার্ট। বিভিন্ন সময় দেখা যায় যে ক্লায়েন্টকে আপনার নির্দিষ্ট কাজের বাহিরে সার্ভিস দেয়া লাগতে পারে। প্রায় সময় মারকেটপ্লেস বা অন্য কোথাও থেকে সার্ভিস নিতে যেয়ে আমাদেরকে বিভিন্ন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। লোকাল কমুনিটী থাকলে সহজেই এই সমস্যার সমাধান করা যায়। যেমন আমাদের লোকাল কমুনিটির কে কি কাজ করে সেটা আমরা জানি। আমাদের কোন সার্ভিস লাগলে আমাদের লোকাল কাউকে দিয়ে আমরা সেই কাজটা করিয়ে নেই। ফলে কোন ধরনের ঝামেলা হবার কোন সুযোগ নেই। আমাদের কমুনিটির অনেকেই এখন তাদের বাড়তি কাজগুলো লোকাল মেম্বারদের দিয়ে করিয়ে নিচ্ছেন এবং এতে যেটা হচ্ছে যে, নতুন ফ্রিল্যান্সারদের উপকার হচ্ছে পাশাপাশি একজন এক্সপার্ট এর কাছ থেকে কাজ শিখতে পারছেন যেটা অমূল্য।
নিজের নিরাপত্তায়
আমাদের নিরাপত্ত একটা চিন্তার বিষয়, কারণ হচ্ছে আমাদের ইনকাম সাধারণ মানুষ থেকে একটু বেশি। ফলে দেখা যায় যখন যখন একজন ফ্রিল্যান্সার এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করে বা কোন বিনিয়োগ করে, তখন মানুষ বাঁকা দৃষ্টিতে দেখে। বিভিন্ন ধরনের ঝামেলার সৃষ্টি করে। বিশেষ করে গ্রামে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। বিভিন্ন ধরনের টাউট-বাটপার এই সুযোগটা বেশি নেয়। এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করতে যেয়ে হেনস্তার স্বীকার হয়েছে এবং সেই চিন্তায় ডায়াবেটিস হয়ে গেছে এমন ফ্রিল্যান্সারকেও দেখেছি। আসলে আপনি যদি একাকী বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করেন, তাহলে এরা সুযোগ বেশি নেবে। কিন্তু সংঘবদ্ধ কোন লোকাল কমুনিটি থাকে, তবে বিপদে আপদে তাদেরকে পাশে পাবেন। এটাই লোকাল কমুনিটির বড় শক্তি। লোকাল কমুনিটি গঠন করে নিজেদের মধ্যে বেশি বেশি যোগাযোগ রাখেন, যেন কেউ বিপদে পড়লে, সহজেই একজন আরেকজনকে সহযোগিতা করতে পারেন। এটা করলে দেখবেন আপনার মধ্যে একটা নিরাপত্তাবোধ চলে আসবে।
মেন্টরশিপে
অনেক এক্সপার্ট আছেন অন্যদের শেখাতে পছন্দ করেন। অর্থাৎ মেন্টরশিপ করতে পছন্দ করে। আমাদের দেশে যেটা দেখি মেন্টরেরা ভাল ছাত্র পায় না, আর ভাল ছাত্ররা শেখার জন্য ভাল মেন্টর পায় না। লোকাল কমুনিটি এর সুন্দর সমাধান হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, আমাদের কমুনিটিতে একজন ভাই যিনি একজন UX/UI এক্সপার্ট তিনি বাছাই করে আমাদের কমুনিটির ৬ জন আগ্রহিকে সরাসরি মেন্টরিং এর মাধ্যমে হাতে কলমে কাজ শেখাচ্ছেন। শুধু তাই না তার এজেন্সির মাধ্যমে তাদেরকে, হাতে কলমে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমাদের ইচ্ছা আছে এরকম যারা এক্সপার্ট আছেন যারা মেন্টরিং করতে আগ্রহী। তাদেরকে এমন ছোট ছোট গ্রুপের মাধ্যমে, যারা আসলেই শিখতে আগ্রহী তাদেরকে কাজ শেখার সুযোগ করে দেওয়া। শুধু তাই না তারা যেন কাজ ভালভাবে শেখার পরে কাজ পায়, সেটার ব্যবস্থা করে দেওয়া।
সরকারকে সহযোগিতায়
ফ্রিল্যান্সিং এখন সরকারের টপ প্রায়োরিটির মধ্যে একটি। কারণ দেশের এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতিদের সবাইকে চাকরী দেয়া সম্ভব না। তাই সরকার চাচ্ছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে অনলাইনের বিভিন্ন কাজের ব্যাপারে দক্ষ করে গড়ে তোলা যেন তারা ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং করে নিজের কর্মসংস্থান করতে পারে। এই জন্য সরকারের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচী চালু রয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমরা প্রকৃত ফ্রীলান্সারেরা নিজেদের নিয়ে এতই ব্যাস্ত থাকি যে এসব কাজে নিজেদের জড়াই না। ফলে সুযোগটা নেয় বিভিন্ন টাউট বাটপাড়েরা। ফ্রিল্যান্সার নামধারী স্ক্যামারেররা নিজেদেরকে ফ্রিল্যান্সার দাবি করে, সরকারের ওপর মহলের সাথে যোগাযোগ করে এবং তাদেরকে বিভ্রান্তির মাধ্যমে নিজেদেরকে নিজেদের সুযোগ সুবিধা গুলো আদায় করে নিচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভাল কিছু শিখতে বঞ্চিত হচ্ছে। লোকাল কমুনিটী গঠনের মাধ্যমে এগুলো খুব সহজেই প্রতিরোধ করতে পারি। আমরা আমাদের নিজেদের জেলা দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে বিভিন্ন সময়ে দেখা সাক্ষাত করতে পারি। আমাদের কার্যক্রমগুলো তাদেরকে জানাতে পারি এবং শুধু তাই না আমাদের মিটআপে তাদেরকে আমন্ত্রণ জানাতে পারি, তাদের পক্ষ থেকে তারা তাদের বক্তব্য দেবেন আমরা আমাদের দাবীদাওয়াগুলো তাদের মাধ্যমে দিতে পারব এবং এভাবেই আমরা সরকারের সাথে একটা সুন্দর যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে, আমাদের উপস্থিতি জানান দিতে পারব এবং ভালো কিছু করতে পারব।
স্কামার প্রতিরোধে
ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে বর্তমানে স্কামারদের রামরাজত্ব চলছে, চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে অসহায় বেকার যুবক যুবতীদেরকে ফ্রিল্যান্সিং থেকে ইনকামের গ্যারান্টি দিয়ে তাদেরকে সর্বস্বান্ত করছে। প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সার হিসাবে আমাদেরও কিছু দায়বদ্ধতা আছে। লোকাল ফ্রিল্যান্সিং কমুনিটি গঠন করে আমরা মাঝে মাঝেই ফেসবুক লাইভ বা এলাকার কোন কলেজে প্রগ্রাম করে বেকার যুবক যুবতীদের ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে ধারনা দিতে পারি। এতে তারা প্রতারণার হাত থেকে বেচে যাবে।
খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামে
ফ্রিল্যান্সারদের অনেকেই এক সময় ভাল খেলাধুলা করতেন, অনেকেই বিভিন্ন ধরনের প্রতিভা ছিল। কেউ হয়ত ভাল গিটার বাজাতেন, কেউ হয়ত বাঁশি, কারো হয়ত অভিনয় প্রতিভা ছিল। কিন্তু ব্যাস্ততার কারনে এসবের চর্চা এখন আর করা হয়ে ওঠে না। কমুনিটী হলে আমাদের এসব হারানো প্রতিভা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। যেমন ঢাকাতে ফ্রিল্যান্সারেরা নিয়মিত ক্রিকেট ফুটবল ব্যাডমিন্টন খেলে থাকেন। এমনকি তাদের প্রফেশনাল টুর্নামেন্ট নিয়মিত হয়। ঢাকার বাহিরে এসব খুব একটা দেখা যায় না। আমরা লোকাল কমুনিটির মাধ্যমে সহজেই বিভিন্ন প্রতিযগিতার আয়োজন করে আমাদের প্রতিভাগুলো আবারো ঝালাই করে দেখতে পারি। এতে শরীর মন দুইটাই ভাল থাকবে। আমাদের লোকাল কমুনিটির প্লান আছে সামনে বড় কোন টুর্নামেন্ট আয়োজন করার।
আপনার করনীয়
আমাদের দেশের অধিকাংশ এলাকায় ফ্রিল্যান্সারদের তেমন কোন সংগঠন সেভাবে নেই। আর যে সকল সংগঠনগুলো আছে, তারা মূলত বছরে একবার একটা প্রোগ্রাম করে তাদের দায়িত্ব শেষ করে দেয়। পরবর্তীতে তাদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। আমি এমন সংগঠনের কথা বলছি যে সংগঠনগুলো সারা বছর ধরে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের উপস্থিতি জানান দিলে উপকার করবে এখন আপনার করনীয় হচ্ছে আপনার এলাকায় যদি কোন লোকাল কমুনিটি থাকে তবে তার সাথে যুক্ত হওয়া। আর যদি না থাকে তাহলে আমি বলব যে, আপনি আপনার এলাকার আশপাশে ফ্রিল্যান্সারদেরকে খুঁজে বের করেন, নিজেদের নিজেদের ভেতর যোগাযোগ বাড়ান এরপরে নিজেরা বসে আপনারা ফেসবুক গ্রুপ খুলেন এবং আস্তে আস্তে কাজ শুরু করে দেন। পথে নামলে পথই পথ দেখায়। আমরা লোকাল কমিউনিটি নিয়ে কাজ করছি প্রায় দুই বছর হয়ে গেল। প্রথমে আমরা নিজের এলাকা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম, আলহামদুল্লাহ সেখানে সফল হওয়ার পরে আমরা জেলা পর্যায় শুরু করেছি, এখন আমরা আমাদের বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আলহামদুলিল্লাহ্ আমাদের বৃহত্তর ময়মনসিংহের গ্রুপ সুন্দর ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। শুনে খুশি হবেন যে, প্রায় ৩৫০ জন ফ্রিল্যান্সার নিয়ে আমাদের বড় মিটাপ আগামি ২৪শে ডিসেম্বর, শনিবার ময়মনসিংহ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে হতে যাচ্ছে। আপনাদের সবাইকে অগ্রিম আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখলাম।
পরিশিষ্ট
আমার অভিজ্ঞতা থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে আমি আমার পোষ্টের ইতি টানব, সেটা হচ্ছে, লোকাল কমুনিটি গঠন করলেই যে সমস্ত ফ্রিল্যান্সাররা যে একত্রিত হবে এমনটি না। অনেকে আছেন যে এগুলো পছন্দ করেন না, কেউ যদি লোকাল কমুনিটিতে আসতে না চান তাকে জোর করে আনার কোন দরকার নেই। কেউ যদি স্বইচ্ছায় আসেন তবেই তাকে আমন্ত্রণ জানান। আমি দেখেছি অনেক ফ্রিল্যান্সার আছেন যারা নিজেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সবার সামনে পরিচয় দিতে বিব্রতবোধ করেন, অনেকে আছেন এই ধরনের ফ্রিল্যান্সার কমিউনিটির ধারনাকেই সমর্থন করেন না। আমি মনে করি তাদের এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো উচিত। সবাইকে সংগঠন করতে হবে এমন কোন কথা নেই। একটা সংগঠন করা খুবই সহজ, কিন্তু সে সংগঠন কে টিকিয়ে রাখা খুবই খুবই কঠিন। কাজেই লোকাল কমিউনিটি ছোট হোক, কিন্তু সেটা যেন সক্রিয় হয় এবং ভাল কাজের সাথে যুক্ত থেকে নিজেদের মধ্যে বন্ধন যেন দৃঢ় হয়। তাহ্লেই সংগঠন টীকবে। আর আর একটা কথা মনে রাখতে হবে, সেটা হচ্ছে এই লোকাল কমুনিটী করতে যেয়ে নিজের কাজের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। আগে নিজের কাজ এর পরে হচ্ছে অন্য কিছু।
পরিশেষে বলব, আমাদের ফ্রিল্যান্সারদের সংগঠিত হতে হবে, লোকাল কমিনিটী গঠন করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। নলেজ শেয়ারিঙের মাধ্যমে নতুন কিছু জানতে হবে। সবাই একত্রিত হয়ে ভাল কোন কাজের সাথে যুক্ত থাকতে হবে। পাশাপাশি অন্যান্য লোকাল ফ্রিল্যান্সিং কমুনিটীর মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। আর এভাবেই আমরা পুরো বাংলাদেশ আমাদের উপস্থিতি জানান দিতে পারব, আমরা বড় কিছু করতে পারব, দেশ ও সমাজের জন্য ভালো কিছু করতে পারব।
কারো যদি কোন কিছু জানার থাকে বা পরামর্শ থাকে তবে কমেন্টে জানাতে পারেন। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আজকের পোস্ট এখানে শেষ করছি