আরপানেট (ARPANET) দিয়ে ইন্টতারনেটের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ একটি গবেষনা প্রকল্পের আওতায় দেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়কে পরীক্ষামূলক কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়। এ নেটওয়ার্কের নাম আর্পানেট। প্রাথমিক অবস্থায় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এ নেটওয়ার্কের ব্যাবহার উন্মুক্ত ছিল। কিন্তু এ অবস্থা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।
১৯৮২ সালে বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মধ্যে সংযোগের উপযোগী টিসিপি/আইপি (TCP/IP Transmission Control Protocol/Internet Protocol) প্রোটোকল উদ্ভাবনের সাথে ইন্টারনেট শব্দটি চালু হয়। ১৯৮৩ সালের আরপানেটে টিসিপি/আইপি প্রোটোকল ব্যাবহার শুরু হয়। এর পর ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যায়।
ইন্টারনেট সম্প্রসারণের প্রক্রিয়াকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। ১৯৬৯ হতে ১৯৮৩ পর্যন্ত পরিক্ষামূলক পর্যায়, এ সময়ে নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ হয় ধীর গতিতে এবং এ পর্যায়ের শেষে বিশটি দেশে সংযুক্ত কম্পিউটারের সংখ্যা ছিল প্রায় দুইশত।
সম্প্রসারণের দ্বিতীয় পর্যায় হলো আশির দশক। ১৯৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সায়েন্স ফাউন্ডেশন নেটওয়ার্ক (NSFNET) প্রতিষ্ঠার ফলে আরপানেটের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং এটি ইন্টারনেট নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৮৯ সালে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বা সার্ভিস প্রোভাইডার চালুর ফলে সকলে জন্য ইন্টারনেট ব্যাবহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ১৯৯২ সালে ইন্টারনেট সোসাইটি (ISOC) প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইন্টারনেট ব্যাবহারের জন্য প্রধানত নিম্নলিখিত জিনিসগুলো প্রয়োজন-
- কম্পিউটার বা ডিজিটাল কোন ডিভাইস
- মডেম
- টেলিফোন
- ইন্টারনেট সংযোগ
- সফটওয়্যার
এছাড়াও ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীর প্রয়োজনবোধে ডিজিটাল ক্যামেরা, প্রিন্টার, স্ক্যানার ইত্যাদি ব্যাবহার করা যেতে পারে।
কম্পিউটার
ইন্টারনেট সংযুক্তির জন্য নুন্যতম ৮০৩০৬ প্রসেসরযুক্ত কোন কম্পিউটার, ৪ মেগবাইট র্যাম এবং অপারেটিং সিস্টেমসহ প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার দরকার পড়ে। তবে আধুনিক ক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটার ব্যাবহার করা হলে ইন্টারনেট বিচরণ স্বাচ্ছন্দ হয়। অনেকেই এজন্য বর্তমানে ১ গিগাবাইট বা তদুর্ধ্ব র্যাম সম্পন্ন পেন্টিয়াম কম্পিউটার ব্যাবহার করে থাকেন। ইন্টারনেট থেকে তথ্যবলী ডাউনলোড করে সংরক্ষন করার জন্য কম্পিউটার মেমরিতে অর্থাৎ হার্ডডিস্কে ফাঁঁকা যায়গা থাকা প্রয়োজন।
মডেম
ইন্টারনেট ব্যাবহার করার জন্য মডেম আরেকটি অপরিহার্য হার্ডওয়্যার। মডেম কম্পিউটার এবং টেলিফোন লাইন, মোবাইল ফোনের সংযোগের জন্য ব্যাবহার করা হয়। মডেম বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যদি ডিজিটাল সাবস্ক্রাইবার লাইনের মাধ্যমে সংযোগ নেওয়া হয় তাহলে DSL মডেম প্রয়োজন। রেডিও লিংকের মাধ্যমে সংযোগ নেওয়া হলে ওয়ারলেস মডেম প্রয়োজন।
টেলিফোন লাইন বা মোবাইল ফোন বা অন্য কোন নেটওয়ার্ক
টেলিফোন লাইন তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। কম্পিউটারে সংযুক্ত মডেমকে টেলিফোন লাইনের সাথে সংযুক্ত করা হয়। এ লাইনের মাধ্যমে ISP এর সার্ভারের সাথে সংযোগ করা যায়। এ্যানালগ বা ডিজিটাল যে কোন ধরনের টেলিফোন লাইনের ইন্টারনেট ব্যাবহার করা সম্ভব। তবে ব্যাবহারকারী সরাসরি যে সার্ভারের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে চান তা একই এলাকায় হলে লোকাল টেলিফোন, অন্য এলাকায় হলে এসটিডি টেলিফোন কিংবা অন্য দেশে হলে আই এস ডি লাইন প্রয়োজন হবে। টেলিফোন লাইন ছাড়াও ডিজিটাল সাবস্ক্রাইবার লাইন কিংবা রেডিও লিংক কিংবা অন্য কোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমেও ইন্টারনেট সংযোগ নেওয়া যায়।
সফটওয়্যার
ইন্টারনেট ব্যাবহার করার জন্য উহার কাজের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার প্রয়োজন হয়। যেমন- সার্ভারের সাথে সংযোগ স্থাপন করার জন্য সফটওয়্যার, ইমেইল প্রেরণ বা গ্রহণ করার জন্য সফটওয়্যার, ইন্টারনেট ব্রাউজিং করার জন্য সফটওয়্যার ইত্যাদি। সাধারনত সার্ভারের সাথে সংযোগ স্থাপন করার জন্য TCP/MAN ডায়াল-আপ নেটওয়ার্ক, ইমেইলের জন্য ইন্টারনেট মেইল, ইউডোরা প্রো, ব্রাউজিং করার জন্য নেটস্কোপ নেভিগেটর, নেটস্কোপ গোল্ড, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, রিয়াল টাইম চ্যাটের জন্য MIRC ইত্যাদি সফটওয়্যার ব্যাবহৃত হয়।
বর্তমানে অনলাইনে ইন্টারনেট সম্পুর্ন আইপি অ্যাড্রেসের উপর বেস করেই কন্ট্রল করা হয়।