বর্তমান সরকার প্রথমবারের মতো ২০২২ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। একটা রক্তক্ষনীয় যুদ্ধের ভেতর দিয়ে ১৯৭১ সালে আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি, ২০২২ সালে তার অর্ধতাব্দী পুর্ণ হবে এবং সে কারণে এই সময়ের ভেতরে আমাদের প্রিয় মাতৃভঊমিকে একটি বিশেষ যায়গায় নেওয়ার একটি স্বপ্ন আমাদের সবাইকে স্পর্শ করেছিল। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ কথাটি সুধু একটি কথা হয়ে থাকেনি। এটাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্যে এই দেশের সরকার এবং সাধারন মানুষ সবাই একটি বড় উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রথমেই আমাদের জানা দরকার এনালগ ক ডিজিটাল কথাটি দিয়ে আমরা কী বোঝায়। পরিবর্তনশীল (বিচ্ছিন্ন) ডাটাকে যখন সংকেতের মাধ্যমে প্রকাশ কএয়া হয় তখন তাকে এনালগ সংকেত বলে। উদাহরনস্বরুপ আমাদের দৈনন্দিন তাপমাত্রার কথা ধরা যাক, দিনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের তাপমাত্রা অনুভুত হয়। এই অনুভুত তাপমাত্রাকে যখন সংকেতেরুপে প্রকাশ করি তখন তাকে এনালগ সংকেত বলি।
এনালগ সংকেতের সাহায্যে আমরা নির্ভুল এবং সুক্ষ তথ্য পাই না, প্রাপ্ত মানের তারতম্য থাকে। এই এনালগ সংকেতকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে দুইটি অবস্থার মাধোমে প্রকাশ করা হয়, এই অবস্থাগুলোকে অংকের (Digit) মাধ্যমে প্রকাশ করার ফলে এনালগ সংকেতের তুলনায় আরো নির্ভুল এবং সুক্ষ থেকে সুক্ষতর তথ্য পাওয়া যায়। Digit এর মাধ্যমে সংকেত প্রকাশের জন্য ব্যাবহৃত এই ধরনের সংকেতকে ডিজিটাল সংকেত বলা হয়। যেমনঃ ধর কাটাযুক্ত ঘড়ি এনালগ সংকেত প্রদর্শন করে, পিক্ষান্তরে কাটাবিহীন ঘড়ি ডিজিটাল সংকেত প্রদর্শন করে।
তবে ডিজিটাল বাংলাদেশ কথাটি শুধু কম্পিউটার প্রস্তুত দেশ হিসেবে ব্যাবহার করা হয়নি। এটি আরও অনেক ব্যাপক। ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে আসলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যাবহার করে গড়ে তোলা আধুনিক বাংলাদেশ বোঝানো হয়। সব ধরনের প্রযুক্তি ব্যাবহার করে এই দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্য মোচনের আংগিকার বাস্তবায়ন হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য। এই লক্ষ্যে পৌছানোর জন্যে আমাদের পুরাতন মানসিকতার পরিবর্তন করে ইতিবাচক বাস্তবতা এবং উদ্ভাবনী চিন্তা খুব জরুরি।
ডিজিটাল বাংলাদেশের পেছনের মূল কথাটি হচ্ছে দেশের মানুষের জন্যে গনতন্ত্র, মানবাধিকার, স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা এবং সুবিচার নিশ্চিত করা এবং সেগুলোর জন্যে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যাবহার করা। তার চূরান্ত লক্ষ্য হচ্ছে সকল শ্রেণির সব ধরনের মানুষের জীবনের মান উন্নয়ন। ডিজিটাল বাংলাদেশ রুপকল্পের বাস্তবায়নের জন্যে সরকার চারটি সুনির্দিষ্ট বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে; সেগুলো হচ্ছে- মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনগণের সম্পৃক্তত, সিভিল সার্ভিস এবং দৈনন্দিন জীবনে তথ্য প্রযুক্তি ব্যাবহার।
পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের কাজটি শুরু করেছে দেরিতে। তাই অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ যথেষ্ট পিছিয়ে আছে। অতীতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি গুরুত্ব যথাযথভাবে উপলব্দী না করলেও বর্তমানে এটি অত্যান্ত গুরুত পাচ্ছে। সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে যুক্ত হওয়ায় আমাদের দেশে এখন দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান সম্ভব হচ্ছে।
প্রযুক্তি প্রসারের একটি সুন্দর দিক রয়েছে, কোনো দেশ বা জাতির একটি নির্দিষ্ট প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকলে সব সময়েই তাদের পিছিয়ে থাকতে হয়না। বড় বড় লাফ দিয়ে (Leap Frog) অন্যদের ধরে ফেলা যায়। তাই বাংলাদেশ তার সর্বশক্তি দিয়ে সামনে এগিয়ে অন্য দেশের সমান হবার চেষ্টা করছে।
সরকারের আগ্রহের কারণে দেশে তথ্য প্রযুক্তির অবকাঠামো গড়ে উঠিতে শুরু করেছে। সারা দেশে ফাইবার অপটিক লাইন বসিয়ে প্রত্যান্ত অঞ্চল পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাত্র এক-দেড় দশক আগেও এদেশে টেলিফোনের সংখ্যা ছিল নগণ্য। এখন নির্দ্ধিধায় বলা যায় এই দেশের প্রত্যেকটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হাতের নাগালে ফোন রয়েছে।
ইউনিয়ন পর্যায় ইনফরমেশন সার্ভিস সেন্টার খোলা হয়েছে, প্রত্যন্ত এলাকায় পোস্ট অফিয়াগুলোকে ই-সেন্টারে রুপান্তরিত করে মোবাইল মানি অর্ডারের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন ইনফরমেশন সেন্টারের সাথে সাথে ডিস্ট্রিক ইনফরমেশন সেল এবমগ ন্যাশনাল ইনফরমেশন সেল দেশের অবকাঠামোতে একটা বড় সংযোজন।